আপনি কি একজন অষ্টম শ্রেণী পাস বেকার চাকরিপ্রার্থীর? বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে চাকরি পাওয়ার জন্য সচরাচর যে ধরনের ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় তা না থাকার কারণে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছেন? তাহলে বলব এখনই এতটা ভেঙে পড়ার কিছু হয়নি। কারন আজ আমরা এমন এক সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের খবর নিয়ে হাজির হয়েছি যেখানে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কোনো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ন্যুনতম অষ্টম শ্রেণী পাস করে থাকলেই আপনি এখানে নির্দ্বিধায় চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এখানে এমন কিছু শূন্যপদ রয়েছে যেগুলিতে উচ্চমাধ্যমিক পাস চাকরিপ্রার্থীরাও চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এখানে যে কোনো পদের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রেই চাকরিপ্রার্থীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
শূন্যপদের নাম:-
রাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে বেশ কিছু সংখ্যক শূন্যপদে গ্ৰুপ ‘সি’ ও গ্ৰুপ ‘ডি’ কর্মী নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন পত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। এখানে যে যে শূন্যপদে কর্মী নিয়োগ করা হবে বলে অফিসিয়াল নোটিফিকেশনে জানানো হয়েছে সেগুলি হল-
• অর্ডারলি
• বেঞ্চ ক্লার্ক
• অ্যাসিস্ট্যিন্ট কাম ডেটা এন্ট্রি অপারেটর
• কাউন্সিলর
প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়সসীমা ও বেতনের পরিমাণ:-
উপরিউক্ত শূন্যপদ গুলিতে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে যে পদের ক্ষেত্রে যে ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ অন্যান্য যোগ্যতা থাকা দরকার সেগুলি হল-
অর্ডারলি–
এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীকে যে কোনো সরকারি স্কুল থেকে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাস করে থাকতে হবে। এছাড়াও বাংলা ও হিন্দি ভাষায় কথা বলতে, লিখতে ও পড়তে পারদর্শী হতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১/০১/২০২৩ অনুযায়ী ২১-৪০ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রতি মাসে ১২,০০০ টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।
বেঞ্চ ক্লার্ক-
এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীকে যে কোনো সরকার স্বীকৃত বোর্ড থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার নলেজ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে, লিখতে ও পড়তে পারদর্শী হতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১/০১/২০২৩ অনুযায়ী ২১-৪০ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ করার পর প্রতি মাসে ১৩,০০০ টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।
অ্যাসিস্ট্যিন্ট কাম ডেটা এন্ট্রি অপারেটর-
এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীকে যে কোনো সরকার স্বীকৃত বোর্ড থেকে কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে থাকতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটারের মাধ্যমে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে এবং অন্তত পক্ষে ১ বছর ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১/০১/২০২৩ অনুযায়ী ১৮-৩৫ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ করার পর প্রতি মাসে ১২,০০০ টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।
কাউন্সিলর-
এই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীকে যে কোনো সরকার অনুমোদিত ইউনিভার্সিটি থেকে Psychology/Social Science/Social Work এ মাস্টার ডিগ্ৰি Complete করে থাকতে হবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার নলেজ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া শিশু কল্যাণ দপ্তরে অন্তত পক্ষে ২ বছর কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এবং আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন মহিলা হতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ২৪-৪০ বছরের মধ্যে। এই পদের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ করার পর প্রতি মাসে ১৯,২৫০ টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।
আবেদন করার নিয়মাবলী:-
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত উপরিউক্ত শূন্যপদ গুলিতে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে চাকরিপ্রার্থীদের সম্পূর্ণ ভাবে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে তার কারন এখানে অনলাইন আবেদনের কোনো রুপ ব্যাবস্থা নেই। অফলাইনের মাধ্যমে যেভাবে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) প্রথমে আমাদের এই প্রতিবেদনের একেবারে নীচে দেওয়া অফিসিয়াল নোটিফিকেশন ১,২,৩ এই তিনটি লিঙ্কে ক্লিক করে এক এক করে তিনটি নোটিফিকেশন ডাউনলোড করে নিতে হবে।
২) এরপর যে আবেদনকারী যে পদের জন্য আবেদন করবেন সেই পদের অফিসিয়াল নোটিফিকেশনের ৩-৪ নম্বর পৃষ্ঠায় দেওয়া অ্যাপ্লিকেশান ফরম্যাটের একটি করে প্রিন্ট আউট বের করে নেবেন।
৩) এরপর সেই ফর্মে আবেদনকারীর নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, অভিভাবকের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জেন্ডার, বয়স, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, একটি বৈধ ইমেল আইডি ও ফোন নাম্বার সহ আরও অন্যান্য তথ্য দিয়ে ফর্মটিকে ফিলাপ করে ফেলতে হবে।
৪) এরপর এক কপি রিসেন্ট তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো ফর্মের একেবারে উপরে ডানদিকে ফটো লাগানোর জন্য যে জায়গা দেওয়া হয়েছে সেখানে লাগিয়ে দিতে হবে এবং ফর্মের একেবারে নীচে ডানপাশে সিগনেচারের জন্য যে জায়গা দেওয়া হয়েছে সেখানে একটি সিগনেচার করে দিতে হবে।
৫) এরপর যে আবেদনকারী যে পদের জন্য আবেদন করেছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্টস সহ আরও যদি কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে তাহলে সেই সব কিছুর মার্কসীট ও সার্টিফিকেটের এক কপি করে জেরক্স বের করে নিতে হবে।
৬) এরপর সেগুলির প্রতিটিকে সেলফ অ্যাটেস্টেড করে ফেলতে হবে।
৭) সবশেষে পূরণ করা আবেদন পত্র সহ এই সেলফ অ্যাটেস্টেড করা জেরক্স কপি গুলি একসঙ্গে পিন দিয়ে যুক্ত করে একটি খামে ভরে খামের উপর যে আবেদনকারী যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদের নাম ও ঠিকানা লিখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় স্পীড পোস্টের মাধ্যমে বা নিজেদেরকে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:-
আবেদন পত্র জমা দেওয়ার সময় তার সঙ্গে যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি যুক্ত করে জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা বার্থ সার্টিফিকেট এর এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
২) দেশ তথা রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দার প্রমান পত্র হিসেবে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৩) অর্ডারলি পদের ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণী পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট সহ আরও যদি কোনো উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে তাহলে তার মার্কসীট ও সার্টিফিকেটের এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৪) বেঞ্চ ক্লার্ক পদের ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট সহ আরও যদি কোনো উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে তাহলে সেই সব কিছুর মার্কসীট ও সার্টিফিকেটের এবং কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেটের এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৫) ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট সহ আরও যদি কোনো উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে তাহলে সেই সব কিছুর মার্কসীট ও সার্টিফিকেট এবং কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট এর এক কপি জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৬) কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ডিগ্রি ও Psychology/ Social Science/Social Work নিয়ে মাস্টার ডিগ্রী পাস করার মার্কসীট ও সার্টিফিকেটের এবং কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট এর এক কপি করে জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৭) কাস্ট সার্টিফিকেট যদি থাকে তাহলে তার এক কপি জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৮) ওয়ার্ক এক্সপিরিয়েন্স সার্টিফিকেটের এক কপি জেরক্স সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
৯) দুই কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো সেলফ অ্যাটেস্টেড করা।
নির্বাচন প্রক্রিয়া:-
এখানে আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আবেদনকারী প্রার্থীদের প্রথমে একটি ৮০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, অ্যারিথমেটিক ও জেনারেল নলেজের উপরে প্রশ্ন থাকবে। এই লিখিত পরীক্ষায় যারা যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা অর্থাৎ একটি ১০ নম্বরের কম্পিউটার টেস্টের জন্য ডাকা হবে। এতেও যারা উত্তীর্ণ হবেন তাদেরকে অন্তিম ধাপের পরীক্ষা অর্থাৎ একটি ১০ নম্বরের ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। এই তিনটি ধাপ মিলিয়ে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে যে যেমন নম্বর পাবেন সেই অনুযায়ী একটি ফাইনাল মেরিট লিস্ট তৈরী করে সেই অনুযায়ী যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তাদেরকে জয়েনিং লেটার পাঠিয়ে চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।
আবেদনের সময়সীমা ও আবেদন পত্র জমা দেওয়ার ঠিকানা:-
নদীয়া ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অফিসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত উপরিউক্ত প্রতিটি পদের জন্যই অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন পত্র জমা নেওয়া গতকাল অর্থাৎ ৬/০২/২০২৩ থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে এবং এই আবেদন প্রক্রিয়া চলবে আগামী প্রায় এক মাস ধরে অর্থাৎ ৩/০৩/২০২৩ পর্যন্ত। তাই যারা আবেদন করতে চান তারা নিম্নলিখিত ঠিকানায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্পীড পোস্টের মাধ্যমে বা নিজেরা গিয়ে আবেদন পত্র জমা করুন। আবেদন পত্র জমা দেওয়ার ঠিকানা হল-
To,
The Social Welfare Section,
Office Of The District Magistrate,
Nadia, Krishnanagar, Pin-741101