পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রুদ্ধ হয়ে এক ভয়ঙ্কর মন্তব্য প্রকাশ করলেন এ রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে সকল রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশন ভোগীদের বকেয়া DA সম্পূর্ণ ভাবে মেটাতে গেলে স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর ন্যায় রাজ্য সরকারের আরও বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক প্রকল্প গুলিতে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। আর তার প্রভাব পড়বে এ রাজ্যের অসংখ্য দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের উপর। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া এক রাজনৈতিক সভায় বক্তৃতা দেওয়া কালীন এমনই এক হতাশার সুর শোনা গেছে এই মন্ত্রীর কন্ঠে। আর এর থেকে এটাই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যতই আন্দোলন, বিক্ষোভ, অনশন করুন না কেন তাতে কোনো লাভ হবে না। অর্থাৎ এই মুহূর্তে তারা তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA পাচ্ছেন না। তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও যে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। তারাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে শীঘ্রই তাদের বকেয়া DA না মেটানো হলে তারা ভবিষ্যতে চরম থেকে চরমতম আন্দোলনে অবতীর্ণ হবেন। যা রাজ্য রাজনীতি থেকে তৃনমূল সরকারের ভীত নড়িয়ে দিতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে যখন বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে চরম মতবিরোধের কারণে তীব্র আন্দোলন চলছে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের যোগী রাজ্য অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশেও সেই একই হাল। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে না পাওয়া বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে ওই রাজ্যেরই গো-বলয় নামক একটি স্থানে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যোগী রাজ্যের দশ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী। তারা সকলে একজোট হয়ে আগামী ১৮ ই মে বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।
তবে আমাদের রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীরা যেমন বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে শুধুমাত্র অনশন কর্মসূচি, বিক্ষোভ আন্দোলন ইত্যাদির মধ্যে থেমে না থেকে প্রথমে হাইকোর্ট ও তারপরে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত মামলা দায়ের করছেন যোগী রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীরা কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমনটা করেননি। এই বিষয়টিকে নিয়ে তারা এখনও পর্যন্ত আদালতের দারস্থ হননি। আমাদের রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে শুধু আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তাই নয় তারা ভিন রাজ্য অর্থাৎ দিল্লিতে গিয়ে সেখানকার যন্তর মন্তরে গত এপ্রিল মাসে ধর্নায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয় বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে তাদের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে করা মামলার শুনানি বারবার বাতিল হয়ে যাওয়ায় তারা অত্যাধিক ক্রুদ্ধ হয়ে কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ও তার ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জীর বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে ঘোরাঘুরি করে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এতসব করার পরেও আজ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।
তবে যোগী রাজ্য অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সরকারি কর্মীরা মূলত তিনটি দাবিতে আগামী ১৮ ই এপ্রিল ওই রাজ্যের গো-বলয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের ন্যায় ধর্মঘট কর্মসূচিতে সামিল হতে চলেছেন। তাদের সেই তিনটি দাবি হল-
১) দীর্ঘ ৫ বছর যাবত না পাওয়া বকেয়া DA যত শীঘ্র সম্ভব মিটিয়ে দিতে হবে।
২) যোগী সরকারের চালু করা নতুন পেনশন পদ্ধতি তুলে দিয়ে পুনরায় আগের সরকারের পুরনো পেনশন পদ্ধতি যত শীঘ্র সম্ভব চালু করতে হবে।
৩) তাদেরকেও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের মতো সমান হারে DA দিতে হবে।
এই তিনটি দাবিকে কেন্দ্র করেই উত্তরপ্রদেশের গো-বলয় এলাকার স্থানীয় স্কুল শিক্ষক থেকে শুরু করে পৌরসভা এবং অন্যান্য সব রাজ্য সরকারি দপ্তরের কর্মী মিলিয়ে মোট ১০ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী আগামী ১৮ ই এপ্রিল ধর্মঘটে সামিল হতে চলেছেন। তবে আমাদের রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে করা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যেমন উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ঠিক তেমনই তাদের করা এইরুপ আন্দোলন থেকে যে আমাদের রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীদের কেও আরও বেশি করে অনুপ্রেরণ যোগাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যোগী সরকার উত্তরপ্রদেশের রাজ্য সরকারি কর্মীদের করা ধর্মঘট কর্মসূচিতে ঠিক কতখানি ঘায়েল হলেন তা ১৮ ই এপ্রিল এর পরেই বোঝা যাবে।
MORE JOB NEWS: CLICK HERE