দেশের অস্থায়ী কর্মজীবী ব্যাক্তিদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার জন্য ভারতীয় ডাকবিভাগের তরফ থেকে চালু করা হল আরও একটি বিশেষ উপকারী স্কিম। এই স্কিমের বিশেষত্ব হল যে এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট অংক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এই স্কিমের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করে আপনি যদি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যখন যেমন পারবেন তেমন অনুযায়ী কিছু কিছু করে অর্থ জমা করেন তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনি প্রতি মাসে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন। যা দিয়ে বিনা পরিশ্রমে আপনার ভবিষ্যৎ জীবন আপনি নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই স্কিমের নাম, এর মাধ্যমে প্রাপ্য সুবিধা ইত্যাদির বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন এবং যত শীঘ্র সম্ভব এই স্কিমের আওতায় নিজের নাম নথিভুক্ত করুন।
আমাদের সকলেরই উচিত যতদিন পর্যন্ত পরিশ্রম করে উপার্জন করতে পারছি সেই সময়ের মধ্যে নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে রাখা। যাতে করে বৃদ্ধ বয়সে যখন আমাদের আর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করার ক্ষমতা থাকবে না তখন বা যখন আমরা আর এই পৃথিবীতে থাকব না তখন এই সঞ্চয় করে রাখা অর্থ দিয়ে যাতে জীবনযাত্রা অতিবাহিত করা যায়। কিন্তু সব উচিত কাজই তো আর সব সময় আমাদের পক্ষে করে ওঠা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার খুব কম সংখ্যক ই আছেন যারা সরকারি চাকুরিজীবী। বেশিরভাগ মানুষই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বা দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকারি চাকুরিজীবি দের তো নাহলে ভবিষ্যত নিশ্চিত। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষদের ভবিষ্যৎ কিভাবে সুনিশ্চিত হবে? বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যে পরিমাণ অর্থ বেতন দেওয়া হয় তা দিয়ে এই অগ্নিমূল্যের বাজারে সংসার চালানো, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো এগুলোই ঠিকঠাক মতো মানুষ সামলে উঠতে পারছেন না তার উপরে আবার ভবিষ্যতের জন্য টাকা সঞ্চয় করে রাখা, কোথায় পাবেন তারা এতো টাকা? আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বর্তমানে ব্যাঙ্ক গুলিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলেই কমকরে ৫০০-১,০০০ টাকা প্রয়োজন। যা সবার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুললে সেখানে তো আর ৫০/১০০ টাকা করে জমা দেওয়া যাবে না একটু বেশি পরিমাণ অর্থ ই জমা করতে হবে। আর সবথেকে বড়ো সমস্যা হল যত দিন যাচ্ছে ব্যাঙ্ক গুলিতে সুদের হারও ক্রমশ কমছে। তাই মানুষ কষ্টশিষ্ট করে সেখানে কিছু পরিমাণ অর্থ জমালেও তার থেকে তেমন ভাবে লাভবান হতে পারছেন না।
আর সেই কারণে এই সব মানুষের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ভারতীয় ডাক বিভাগের তরফ থেকে একাধিক ইনভেস্টমেন্ট মূলক স্কিম চালু করা হয়েছে। যেখানে খুব কম পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে তার থেকে অনেক গুন বেশি পরিমাণ অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। সবথেকে বড়ো বিষয় হল এইসব ইনভেস্টমেন্ট মূলক স্কিম গুলিতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলতে কোনো টাকা লাগে না। এখানে মানুষ নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ সঞ্চয় করে রাখতে পারেন। ভারতীয় ডাকবিভাগের তরফ থেকে চালু করা বেশ কিছু ইনভেস্টমেন্ট মূলক স্কিম এর বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আপনাদের জানিয়েছি। আজ আবারও এমনই এক স্কিমের বিষয়ে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলেছি। ভারতীয় ডাকবিভাগের তরফ থেকে সম্প্রতি চালু করা নতুন এই স্কিমের নাম হল “মাসিক ইনকাম স্কিম”। নিম্নে এই স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল।
“মাসিক ইনকাম স্কিম” থেকে কি কি সুবিধা পাওয়া যায়?
ভারতীয় ডাকবিভাগের তরফ থেকে চালু করা এই স্কিমের মাধ্যমে যে যে সুবিধা গুলি পাওয়া যাবে সেগুলি হল-
১) এই স্কিমের আওতায় মোট জমানো টাকার উপর মাসিক ৭.১% হারে সুদ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।
২) এই স্কিমের আওতায় শুধু যে এককালীন নিয়মেই টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। আপনি এখানে আপনার আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী ধাপে ধাপে ও টাকা জমা রাখতে পারেন।
৩) এই স্কিমে টাকা জমা রাখলে আপনি পাবেন আপাতকালীন টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ অর্থাৎ এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করার কয়েক বছর পর আপনি যদি কোনো জরুরি প্রয়োজনে সেই টাকা তুলে নিতে চান তাহলে আপনি তা করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে সামান্য পরিমাণ পেনাল্টি চার্চ দিতে হবে।
৪) এই স্কিমের আওতায় বিনিয়োগ করা অর্থ সম্পূর্ণ ভাবে করমুক্ত।
৫) এই স্কিমের আওতায় টাকা বিনিয়োগ করলে আপনি প্রতি মাসে ১২৫০ টাকা করে সুদ পাবেন।
“মাসিক ইনকাম স্কিম” এর শর্তগুলি কি কি?
এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করতে হলে আপনাকে কিছু শর্ত অবশ্যই পালন করতে হবে। এবং সেগুলি হল-
১) এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করতে হলে বিনিয়োগকারীর বয়স হতে হবে ১৮ বছরের উর্ধ্বে। তবে ১৮ বছরের নীচের কোনো নাবালক বা নাবালিকা যদি এই স্কিমের আওতায় টাকা বিনিয়োগ করতে চান সেক্ষেত্রে তাকে তার বাবা মা বা অন্য কোনো অভিভাবকের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিনিয়োগ করতে হবে।
২) এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করতে হলে আপনাকে কমপক্ষে ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। তবে তার পরেও আরও ৫ বছরের জন্য আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন তবে এবং সেই অনুযায়ী আপনার প্রাপ্য সুদের পরিমানও বাড়তে থাকবে। এবং সেই সুদের টাকা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা পড়বে।
৩) এই স্কিমের আওতায় আপনি ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট এর ক্ষেত্রে। আর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট এর ক্ষেত্রে ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
৪) এই স্কিমে টাকা বিনিয়োগ করার ৬-১২ মাসের মধ্যে যদি কোনো বিনিয়োগকারী তার জমানো টাকা তুলে নেন তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি এই স্কিমের মাধ্যমে দেওয়া সুদের সুবিধা পাবেন না। তাকে সাধারণ সেভিংস এর নিয়মেই সুদ দেওয়া হবে।
এই স্কিমে অর্থ বিনিয়োগ করতে হলে কিভাবে করতে হবে?
“মাসিক ইনকাম স্কিম” এ টাকা জমানোর জন্য আপনাকে আপনার নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে সেখানকার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে এই স্কিমের বিষয়ে আরও বিস্তারিত ভাবে কিছু জানার থাকলে তা জেনে সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে মাসিক হিসেবে টাকা জমা রাখতে হবে।
কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
এই স্কিমের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ করা শুরু করতে হলে যে যে ডকুমেন্টস গুলি জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) আধার কার্ডের জেরক্স।
২) ভোটার কার্ডের জেরক্স।
৩) রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
৪) পঞ্চায়েত প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট।
কতদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে?
এখানে আবেদন করার কোনো রুপ শেষ সময় সীমা নেই। সব সময়ই আবেদন করা যায়। তাই আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী পোস্ট অফিস খোলা থাকাকালীন সময়ে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।