বকেয়া DA আদায়কে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারকে এক ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ জানালো সরকারি কর্মীরা | WB Govt Employee

দীর্ঘ দু-বছর যাবৎ রাজ্য সরকারি কর্মীরা তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে বহু মামলা মোকদ্দমা বিক্ষোভ আন্দোলন করার পরেও এখনও পর্যন্ত  রাজ্য সরকার তাদের প্রাপ্য ৩৮ % DA সম্পূর্ণ ভাবে মেটানোর সিদ্ধান্ত নিল না। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের ২০২২-২৩ এর যে বাজেট পেশ হয়েছে সেই বাজেট পেশ অনুষ্ঠানে এতো বিশাল অঙ্কের বকেয়া DA এর মধ্যে মাত্র ৩ % DA মেটানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই বিষয়টাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ৩৮% DA বকেয়া রয়েছে সেখানে মাত্র ৩% মেটানোর সিদ্ধান্ত শুনে রাজ্য সরকারি কর্মীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে মুখের উপর জানিয়ে দিয়েছেন যে ভিক্ষার দান তারা গ্ৰহন করবেন না। এবং তারা যেভাবে আন্দোলন করছেন সেভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এর পাশাপাশি তারা রাজ্য সরকারকে একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

 

      মনে চরম রাগ ও ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মীরা মুখ বুজে এতদিন সব সহ্য করে নিয়েছিলেন। তাদের মনে কোথাও একটা সুপ্ত বিশ্বাস ছিল যে ১৬ ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তার রায় হয়তো তাদের পক্ষেই যাবে। আর সেই কারণেই তারা এতদিন পর্যন্ত শান্ত হয়ে সবকিছু সহ্য করছিলেন। কিন্তু ১৬ ই জানুয়ারি ও যখন এই ডি.এ মামলার কোনো ফয়সালা হল না অর্থাৎ ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে তাদের অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল। তখন আর তারা শান্ত থাকতে পারলেন না। রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের ২৮ টি সংগঠন তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার অনুমতিতে গত ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল চালিয়েছেন। আর এই বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে সেদিন থেকে শুরু করে কিছুদিন আগে পর্যন্তও তারা কলকাতা শহিদ মিনারের সামনে ধর্নায় ছিলেন। এবং ধর্নায় বসার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা অনশন কর্মসূচি পালন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা। সেইসঙ্গে তারা এও জানিয়েছেন যে এই অনশনেও যদি কাজ না হয় অর্থাৎ এতেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে রাজ্য সরকারের সামনে তা নিয়ন্ত্রনে আনার আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। 

           রাজ্য সরকারি কর্মীদের এইরুপ বিক্ষোভ কর্মসূচির ভবিষ্যত কল্পনা করে রাজ্য সরকার এতটাই ভীত হয়েছে যে যত শীঘ্র সম্ভব সকল রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশন ভোগীদের সম্পূর্ণ ভাবে না হলেও অন্তত পক্ষে ৩ শতাংশ DA মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। এই ৩ শতাংশ হারে DA দেওয়া শুরু হলে যে সব কর্মীদের বেসিক পে ৩০,০০০ টাকা তাদের বেতন ৯০০ টাকা করে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সরকারের নেওয়া এইরুপ সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারি কর্মীরা একেবারেই সন্তুষ্ট হননি। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৩৬ শতাংশ হারে DA এর সুবিধা ভোগ করছেন সেই সময় দাঁড়িয়ে তারা এই মাত্র ৩ শতাংশ DA কে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে দেওয়া ভিক্ষা বলে মনে করছেন। আর তাই কোনো ভাবেই তারা এই ভিক্ষা গ্ৰহন করবেন না। তারা যেভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন সেভাবেই তা পালন করবেন। এবং খুব শীঘ্রই তারা তাদের পরবর্তী বিক্ষোভ কর্মসূচির দিনক্ষণ ও ঘোষণা করে দেবেন। 

         আর সেই অনুযায়ী কিছুদিন আগে রাজ্যের সকল স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকারা রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে কোনো রকম বদল হয়নি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে যাই হয়ে যাক না কেন এই মূহুর্তে ৩% এর চেয়ে বেশি DA তিনি কোনো ভাবেই মেটাতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন সিদ্ধান্তে আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা সরকারকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট তার আগে তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA না মেটালে তারা কোনো ভাবেই ভোটের ডিউটি করবেন না। এর পাশাপাশি তারা এও সাফ জানিয়েছেন যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য সরকার যদি রাজ্য সরকারি কর্মীদের দিয়ে ভোটের দায়িত্ব পালন করাতে চান তাহলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ও সরকারকে নিতে হবে। অর্থাৎ বকেয়া DA মিটিয়ে দেওয়া ও ভোটের ডিউটি তে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া এই দুটি কর্তব্য যদি রাজ্য সরকার সঠিক ভাবে পালন করেন তবেই রাজ্য সরকারি কর্মীরা আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের ডিউটি তে অংশগ্রহণ করবেন নচেৎ নয়। 

     তাদের এই রুপ দাবির পিছনে যথেষ্ট কারণ ও নিহিত রয়েছে। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ রাজ্যের মাটিতে রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়ে প্রান হারানো মানুষের সংখ্যা হল ৯৭ জন।  পাঁচ বছর পর আবার সেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাতে ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই কারনেই সরকারকে এহেন চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। এখান সরকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের কথা মেনে নেবে নাকি নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে তার উপরই নির্ভর করছে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভবিষ্যত। তবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের দেওয়া এহেন চ্যালেঞ্জ এর জেরে রাজ্য সরকারের একেবারে নাকানিচুবানি খাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


MORE JOB NEWS: CLICK HERE

চাকরির সম্বন্ধীয় আরো বিস্তারিত খবরা খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল যুক্ত হন।

TELRGRAM CHANNEL:  CLICK HERE

Leave a Comment