বিশেষ কিছু কারণ বশত বাংলা আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাতিল করা হল লক্ষ মানুষের নাম। অনেকেই বাংলা আবাস যোজনায় আবেদন করেছিলেন এবং তাদের নাম লিস্টে চলে এসেছিল পরবর্তীকালে এই সমস্ত নাম আবার বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেই আমরা দেখতে পেয়েছিলাম বাংলা আবাস যোজনায় প্রচুর ব্যক্তির নাম বাদ পড়েছে আবারো নতুন একটি লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার আবেদনকারীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি এই বাংলা আবাস যোজনায় আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনার নাম লিস্টে আছে কি নেই বা আপনার নাম বাদ পড়েছে কিনা এছাড়াও আপনি যদি আবেদন না করে থাকেন তাহলে নতুন করে কিভাবে আবেদন করবেন বিস্তারিত আপনি এই প্রতিবেদনটি পড়লেই ভালোভাবে জেনে যেতে পারবেন। আপনি যদি এই বাংলা আবাস যোজনায় নিজের নাম নথিভুক্ত করে থাকেন তাহলে আজই আপনি যে পঞ্চায়েতের বাসিন্দা অর্থাৎ যেই পঞ্চায়েত অফিস থেকে আবেদন করেছিলেন সেখানে গিয়ে খোঁজ নিন যে এই আবাস যোজনার তালিকা থেকে কোনো কারনে আপনার নামও বাতিল করা হয়নি তো? আর যদি এখনও এই আবাস যোজনায় নিজের নাম নথিভুক্ত না করে থাকেন তাহলেও জেনে নিন যে ঠিক কি কারনে এই ১ লক্ষ ১৭ হাজার আবেদনকারীর নাম বাতিল করা হল। আর সেই অনুযায়ী নিজেও সতর্ক হয়ে যান।
গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বাংলা আবাস যোজনার সার্ভে করে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। আর সেদিন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি কর্মীরা এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে সরকারের কাছে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর বাংলা আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাতিল করা হল পশ্চিমবঙ্গের ১ লক্ষ ১৭ হাজার আবেদনকারীর নাম। কিন্তু কেন এমনটা হল? কি অপরাধে বাতিল করা হল এই বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর নাম? এই কারন গুলি জানতে হলে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি একটু ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের মাথার উপর কোনো ছাদ নেই, অন্যের বাড়িতে ভাড়া করে থাকতে হয় আর এর কারণ হল তাদের আর্থিক অক্ষমতা। আর যাও বা তাদের মধ্যে কারো কারো নিজস্ব ঘর আছে সেগুলো দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাবহারের ফলে ভেঙে চুরে গিয়ে বাসস্থানের অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সমস্ত মানুষ এই বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে নিজেদের বাসস্থান নির্মাণ করে আবারও শান্তিতে ও সুরক্ষিত ভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন। এক কথায় বলা যায় তাদের একটি স্থায়ী ও সুরক্ষিত ঠিকানা তৈরি করে দেয়াই হল আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে চালু হওয়া এই বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের বহু দরিদ্র পরিবার উপকৃত হয়েছে এবং আগামী দিনেও বহু দরিদ্র পরিবার উপকৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ নতুন করে আবারো এই আবাস যোজনার আবেদন গ্রহণ করা হবে। যারা এখনো এই প্রকল্পের সুবিধা উপভোগ করতে পারেননি তারা নতুন করে এবার এই প্রকল্পের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
কিন্তু এর আগে বেশ কিছু সময়ে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে যে আমাদের রাজ্যের এমন কিছু মানুষ এই প্রকল্পে আবেদন করছেন যাদের আবেদন করা একেবারেই উচিত নয়। কারন এই বাংলা আবাস যোজনা কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র বাসস্থান হীন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী জনসাধারণের জন্য চালু করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে যে আমাদের রাজ্যের এমন কিছু মানুষ এই প্রকল্পে আবেদন করেছেন যারা হয় সরকারি চাকুরিজীবী অথবা যাদের ইতিমধ্যেই পাকা বাড়ি রয়েছে। আর সেই কারণেই এইসব দুর্নীতির যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে তাই কেন্দ্রীয় সরকার এই বাংলা আবাস যোজনার আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫ টি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। এবার থেকে এই শর্তগুলি মেনে যারা এই প্রকল্পে আবেদন করবেন তারাই কেবলমাত্র এই আবাস যোজনার সুবিধা লাভ করবেন বাকিরা নন।
আর ঠিক সেই কারনেই গত ৩১ শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য জুড়ে বাংলা আবাস যোজনার সার্ভে করে এই ধরনের বহু দুর্নীতি মূলক ঘটনা সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে কোনো আবেদনকারীর হয়তো নিজস্ব কোনো জায়গা নেই বা আবেদন করার সময় যে সব ডকুমেন্টস গুলি জমা দিয়েছিল সেগুলো সব ভুয়ো। আর সেই কারণেই সরকারের কাছে এই সার্ভের ফাইনাল রিপোর্ট জমা পড়ার পর তৎক্ষণাৎ সরকার পশ্চিমবঙ্গের মোট ১ লক্ষ ১৭ হাজার আবেদনকারীর নাম বাতিল করে দেন। এবং এই বাতিল করার পর দেখা যাচ্ছে যে বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ি পেতে চলেছে বাঁকুড়া জেলা। তারপর রয়েছে কোচবিহার ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এবং এই যোজনার মাধ্যমে সবচাইতে কম বাড়ি পেতে চলেছে মুর্শিদাবাদ জেলা। কারন এই সার্ভের মাধ্যমে সবচাইতে বেশি দুর্নীতি ধরা পড়েছে মুর্শিদাবাদ জেলাতে। প্রথমে যেখানে এই জেলার মোট ৫০ হাজার মানুষকে এই বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার বাসস্থান গড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেখানে ফাইনাল সার্ভের রিপোর্টের ভিত্তিতে বহু ব্যাক্তির নাম বাতিল হওয়ার পর এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৯ তে।
তাই বাংলার প্রতিটি জনগণের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে এবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বাংলা আবাস যোজনার আবেদনের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া ১৫ টি শর্ত অনুসরণ করে সেই সেই অনুযায়ী এই প্রকল্পে আবেদন করবেন।
এরপর যারা বাংলা আবাস যোজনার জন্য নতুন করে আবেদন করতে চান তারা অবশ্যই গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা হলে গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে অথবা পৌরসভা বাসিন্দা হলে পৌরসভায় গিয়ে আবেদন জানাতে পারেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের সরাসরি অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়েও এই যোজনায় নিজে নিজেই আবেদন করতে পারবেন। যারা যারা এই প্রকল্পে আবেদন করেছেন তারা ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে যাবেন।