দীর্ঘ ৩ বছর ধরে চলতে থাকা DA মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা মামলার একের পর এক শুনানি বাতিল হয়ে যাওয়ায় রাজ্য কর্মী সংগঠনের ২৮ টি সংগঠন তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত যে বিক্ষোভ মিছিল চালিয়েছেন এবং তারপরে তা শেষ করে সেদিন থেকে শুরু করে বেশ কিছুদিন ধরে তারা কলকাতা শহিদ মিনারের সামনে ধর্নায় ছিলেন এবং ধর্নায় বসার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টার এক অনশন কর্মসূচিও পালন করেছিলেন। সেইসঙ্গে তারা এও জানিয়েছেন যে এই অনশনেও যদি কাজ না হয় অর্থাৎ এতেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে রাজ্য সরকারের সামনে তা নিয়ন্ত্রনে আনার আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের এইরুপ বিক্ষোভ কর্মসূচির ভবিষ্যত কল্পনা করে রাজ্য সরকার এতটাই ভীত হয়েছে যে এইমাত্র কিছুদিন আগে বিধানসভায় রাজ্য সরকারের ২০২২-২৩ বর্ষের যে বাজেট পেশ অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়েছে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সন্মতিতে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অন্যান্য সব বিষয়ে বাজেট ঘোষণা করার পাশাপাশি যত শীঘ্র সম্ভব সকল রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশন ভোগীদের সম্পূর্ণ ভাবে না হলেও অন্তত পক্ষে ৩ শতাংশ DA মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সরকারের নেওয়া এইরুপ সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকারি কর্মীরা একেবারেই সন্তুষ্ট হননি। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৩৬ শতাংশ হারে DA এর সুবিধা ভোগ করছেন সেই সময় দাঁড়িয়ে তারা এই মাত্র ৩ শতাংশ DA কে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তাদেরকে দেওয়া ভিক্ষা বলে মনে করছেন। আর তাই কোনো ভাবেই তারা এই ভিক্ষা গ্ৰহন করবেন না। তারা যেভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন সেভাবেই তা পালন করবেন। এবং খুব শীঘ্রই তারা তাদের পরবর্তী বিক্ষোভ কর্মসূচির দিনক্ষণ ও ঘোষণা করে দেবেন। আর রাজ্য সরকারি কর্মীদের এহেন সিদ্ধান্তে কলকাতা হাইকোর্টের তরফ থেকেও সায় মিলেছে।
রাজ্য কর্মী সংগঠন থেকে শুরু করে রাজ্য হাইকোর্টও পর্যন্ত যখন ৩৮ শতাংশ DA মেটানোর জায়গায় মাত্র ৩ শতাংশ DA মেটানো নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা মন্তব্য যেন রাজ্য সরকারের কাছে গোদের উপরপর বিষফোঁড়া। গতকাল অর্থাৎ সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই DA মামলা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষপাতিত্ব করলে সেই খবর আমাদের রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কানে পৌঁছনো মাত্রই শুভেন্দু অধিকারীর DA মামলা নিয়ে করা যাবতীয় মন্তব্য কে কটাক্ষ করে তিনি গতকাল অর্থাৎ সোমবার বিধানসভায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বলেন যে রাজ্য সরকার আর কি কি করবে? প্রাক্তন রাজ্য সরকার অর্থাৎ বামফ্রন্ট সরকার যে ৩৪ বছর ধরে রাজত্ব করেছিল তখন থেকে ৫ ম পে কমিশন পর্যন্ত যে DA বকেয়া ৯৯ শতাংশ DA রেখে গিয়েছিল তাও তৃনমূল সরকারকেই মেটাতে হয়েছে। এছাড়াও বাকি রাজ্য গুলিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের পেনশন দেওয়া বন্ধ করে দিলেও রাজ্যের কোষাগারে চরম টান পড়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার অধীনস্থ কর্মীদের পেনশন দেওয়া এখনও পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিরোধী পক্ষরা তাহলে কি চাইছেন অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের পেনশন বন্ধ হয়ে যাক?
তিনি এও বলেছেন যে অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও যদি সরকারি কর্মীদের পেনশন দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হতো তাহলে রাজ্য সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকা বেঁচে যেত। এছাড়াও তিনি এও বলেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় রাজ্য সরকার তার অধীনস্থ কর্মচারীদের বছরে অনেক বেশি পরিমাণ ছুটি দিয়ে থাকে। যেমন দুর্গাপূজায় রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১০ দিন ছুটি দেওয়া হয় এছাড়াও ছট পুজোতেও ছুটি দেওয়া হয়। এছাড়াও বামফ্রন্ট সরকারের না মেটানো ৯৯ শতাংশ DA তো তৃণমূল সরকার মিটিয়েছে ই তার উপর আরও ৬ শতাংশ DA ও রাজ্য সরকার মিটিয়ে দিয়েছে বলে তার দাবি। এছাড়াও সেদিন বিধানসভার ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জানিয়েছেন যে প্রত্যেক রাজ্য সরকারি কর্মীকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রতি দশ বছর অন্তর একবার শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণের সুবিধাও দিয়ে থাকে রাজ্য সরকার।
তবে এতো সবকিছু জানালেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া DA কবে ঠিকঠাক মতো মেটানো হবে সেই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। কবে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সদোত্তর মিলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।