আমাদের সকলেরই উচিত জীবিত থাকাকালীন ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করে রাখা। যাতে আমরা যখন আর এই পৃথিবীতে থাকবো না তখন আমাদের পরিবারের বাকি সদস্যদের যাতে খাওয়া পড়ার কোনো রকম অসুবিধা না হয়। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে টাকা সঞ্চয় করতে হলে তো সবার আগে একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আর এই অ্যাকাউন্ট খুলতে খুব কম করে হলেও ৫০০-১০০০ টাকা তো লাগবেই। আর ঠিক সেই কারনেই আমাদের দেশের দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা এই বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে ওই সামান্য উপার্জনের টাকায় সংসার চালিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ব্যাঙ্কে টাকা সঞ্চয় করে রাখার সুযোগই পান না। আমাদের দেশের দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী এই সমস্ত জনগণের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েক বছর আগেই জনধন যোজনা নামক একটি প্রকল্প চালু করে সেই প্রকল্পের মাধ্যমে এই সমস্ত শ্রেনীর মানুষদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক গুলিতে জিরো ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যাতে বিনা পয়সায় সেই সব ব্যাঙ্ক গুলির মধ্যে কোনো একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের যখন যেমন সামর্থ্য হবে সেই অনুযায়ী একটু একটু করে অর্থ তারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন।
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর চালু করা এই জনধন যোজনা প্রকল্পের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের প্রায় ৪৭ কোটি দরিদ্র মানুষ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক যেমন- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা ইত্যাদি ব্যাঙ্ক গুলিতে বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানেন না। আর তা হল আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে চালু হওয়া এই জনধন যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে শুধুমাত্র যে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা বিনামূল্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা লাভ করেন তা নয়, এই জনধন যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে যারা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় জিরো ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাদেরকে এই ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকার আপদকালীন বীমাও প্রদান করা হয়। এবং এগুলি ছাড়াও এই জনধন যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদেরকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আরও বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই সুবিধা গুলি সন্বন্ধে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
জনধন যোজনার মাধ্যমে প্রাপ্য বীমার পরিমাণ ও অন্যান্য সব সুবিধা:-
১. প্রধানমন্ত্রী আবিস্কৃত এই জনধন যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা পাবেন।
২. এই যোজনার মাধ্যমে আপনি আপনার জিরো ব্যালেন্সের অ্যাকাউন্টে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা সঞ্চয় করে রাখতে পারবেন ।
৩. এই প্রকল্পের মাধ্যমে খোলা অ্যাকাউন্ট জিরো ব্যালেন্সের হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং এর পর কোনো চার্জ ছাড়াই সম্পূর্ন বিনামূল্যে ATM কার্ড দেওয়া হবে এবং আপনার সঞ্চিত অর্থের উচ্চ হারে সুদ দেওয়া হবে।
৪. এবং সম্পূর্ন বিনামূল্যে নেট ব্যাঙ্কিং সুবিধা দেওয়া হবে।
৫. এই জনধন যোজনার মাধ্যমে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনা ও পেনশনের সুবিধাও দেওয়া হবে।
৬. এই যোজনার মাধ্যমে উপভোক্তার মৃত্যুর পর তার পরিবারের হাতে একবারে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পে আবেদন করার পদ্ধতি:-
এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে সেগুলি হল-
১) প্রথমে আপনাকে আপনার নিকটবর্তী যে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে এই যোজনার বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে।
২) তারপর আপনার নিজের যাবতীয় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর জেরক্স দিয়ে সেই ব্যাঙ্কে জনধন যোজনার একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:-
জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে আপনাকে যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের এবং দেশের নাগরিকের প্রমানপত্র হিসেবে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের জেরক্স।
২) এক বা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
৩) পঞ্চায়েত কর্তৃক প্রদত্ত একটি ইনকাম সার্টিফিকেট।
জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট খোলার শেষ তারিখ:-
জনধন যোজনা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া এই মুহূর্তে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই চলছে। আর এই অ্যাকাউন্ট ওপেনিং প্রক্রিয়ার কোনো রকম শেষ সময় সীমা নেই। আপনারা আপনাদের সময় সুবিধা মতো যে কোনো দিন আপনাদের নিকটবর্তী যে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।