রাজ্যের প্রতিটি প্রাইমারী টেট ২০২২ পরীক্ষার্থীর জন্য সুখবর। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগের তারিখ ঘোষণা করলেন আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন যে টেট পরীক্ষার পর ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আগামী এপ্রিল মাস থেকেই প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। তারপর এক এক করে সকল শিক্ষা স্তরেই শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। তিনি এও জানিয়েছেন যে এপ্রিল মাস থেকে প্রাইমারীতে যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে তার মাধ্যমে রাজ্য জুড়ে মোট ১১-১২ হাজার শিক্ষককে নিয়োগ করবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এর পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন যে আগামী এপ্রিল মাস থেকে প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল গুলিতেও প্রধান শিক্ষক পদে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
প্রাইমারি বোর্ডের সভাপতি ঘোষণা করেছেন প্রতিবছরে প্রাথমিক টেট পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং প্রতিবছরের শিক্ষক নিয়োগ করা হবে সেই অনুযায়ী চলতি বছরে শেষের দিকে আবারো নতুন করে প্রাইমারি টেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে যত যাই হয়ে যাক না কেন প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগ যেন কখনোই স্বচ্ছভাবে হওয়া সম্ভব নয়। একে ঘিরে কোনো না কোনো দুর্নীতি যেন হতেই হবে। এবারের প্রাইমারী টেট পরীক্ষা আগের বারের টেট পরীক্ষা গুলির তুলনায় সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে হওয়ার কারনে সবে মাত্র প্রাইমারী টেট পরীক্ষার্থীরা একটু আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন এমতাবস্থায় আবারও নতুন করে প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হল একটি নতুন ঝঞ্ঝাট। যার ফলে আবারও পুনরায় প্রাইমারীতে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে উঠতে চলেছে তুমুল ঝড়।
আর এর পিছনে যে কারন রয়েছে তা হল গত ১৮ ই জানুয়ারি বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার ওই জেলার জেলা শাসককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে বাঁকুড়া জেলার খাতরা ডিভিশনের অধীনস্থ পাচতি থানা এলাকার ৪৬ টি প্রাইমারী স্কুলে ওই এলাকার বর্তমানে সিভিক ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত কর্মীরাই অংক ও ইংরেজি এই বিষয় দুটি ছাত্র ছাত্রীদের পড়াবেন। এবং তার জন্য যাবতীয় তোড়জোড় করাও শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া জেলার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমগ্ৰ বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ১৫০ জন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে এই কাজের জন্য নির্বাচন করাও হয়ে গিয়েছে। আর বাঁকুড়া জেলা প্রশাসকের নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে চরম বিক্ষোভ।
আর এই বিক্ষোভকে থামানোর জন্য আমাদের রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্বয়ং উদ্যোগ নিয়ে গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সচিব মনিষ জৈন কে দিয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কাছে এই রুপ সিদ্ধান্তের বিষয়ে কৈফিয়ৎ তলব করেছেন। তিনি এটাই জানতে চেয়েছেন যে শিক্ষা দপ্তরের কোনো রকম কোনো অনুমোদন ছাড়াই কিভাবে এই রকম একটা মূর্খের মতো সিদ্ধান্ত নিল তারা? অবিলম্বে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে এই বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের কাছে আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠাতে কঠোর ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং যতদিন পর্যন্ত না পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো উত্তর মিলছে ততদিন পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে স্থগিত রাখা হয়েছে।
নতুন করে যে প্রাইমারি টেট পরীক্ষা হবে সেটি নতুন সিলেবাস অনুযায়ী টেট পরীক্ষা হবে, তাই যারা নতুন প্রাইমারি টেট পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তারা ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের তরফ থেকে যে নতুন সিলেবাস দেওয়া হয়েছিল সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন।