প্রত্যক্ষ ভাবে যতই দেশ চালানোর ভাড় দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর এবং রাজ্য চালানোর ভাড় রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপর অর্পিত থাকুক না কেন একটা দেশ বা রাজ্যকে প্রতিনিয়ত সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে পরিচালিত হতে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে চলেছেন পুলিশ বাহিনী। যতই প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী থাকুন না কেন দিন রাত জেগে রোদে পুড়ে জলে ভিজে একটা দেশ বা রাজ্যকে বিভিন্ন দিক থেকে নিরাপত্তা প্রদান করে পুলিশ বাহিনী। কিন্তু তার বিনিময়ে তাদের প্রাপ্য সন্মান কি তারা পান? এই তো কিছুদিন আগেই বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের শহিদ মিনারের সামনে করা ধর্না বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তারা ধর্নায় অবতীর্ণ হওয়া রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তাদেরকে আন্দোলন থেকে সরে আসার কথা বলায় রাজ্য সরকারি কর্মীরা কলকাতা পুলিশের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করা থেকে শুরু করে তাদের শ্রাদ্ধ শান্তি করার উপক্রম করে।
তবে আম জনতা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যতই খারাপ আচরন করুন না কেন আমাদের রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই এ রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর উপর সহৃদয়বান। তিনি এ রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্মান জ্ঞাপনের জন্য ও তাদের একদিনের জন্য হলেও কর্মবিরতি দানের উদ্দেশ্যে বছরে একটি করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন যার নাম হল ‘জয় হে’। আর এবার তিনি আমাদের রাজ্যের প্রশাসনিক বাহিনীর মঙ্গলার্থে একটি বিশেষ সিদ্ধান্ত নিলেন। সম্প্রতি নবান্নে সংঘটিত স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক বৈঠকে তিনি এই বিশেষ সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। তার নেওয়া সেই সিদ্ধান্তটি কি? কবে থেকে তা কার্যকর হতে চলেছে এই সবকিছু জানতে হলে আপনাদেরকে এই প্রতিবেদনটি একটু ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে।
গতকাল অর্থাৎ সোমবার রাজ্যের নবান্ন অফিসে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার প্রায় প্রতিটি থানাতেই কনস্টেবল পদে বেশ কিছু সংখ্যক শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। এবং রাজ্য সরকার যত শীঘ্র সম্ভব এই শূন্যপদ গুলি পূরণের ব্যাবস্থা নিতে চলেছে। তবে এবারের কনস্টেবল পদে কর্মী নিয়োগ একটু অন্য ধরনের হতে চলেছে। এবারে আর অন্যান্য বছরের মতো সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদেরকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হবে না। এবারে সেইসব ব্যাক্তিকে কনস্টেবল পদে নিযুক্ত করা হবে যারা বর্তমানে সিভিক ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত অবস্থায় রয়েছেন। এর ফলে সিভিক ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত ব্যাক্তিদের রাজ্য সরকারের স্থায়ীপদে চাকরিও মিলবে এবং বেতনের পরিমাণও বাড়বে। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করার ফলে রাজ্যের প্রসাশনিক ভিতও আরও বেশি মজবুত হবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করলেও তিনি এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে। এর পাশাপাশি তিনি এই ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত ব্যাক্তিদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ৩ টি শর্তও রেখেছেন। এই শর্তগুলি হল-
১) ভলেন্টিয়ার পদে কর্মরত যে সব ব্যাক্তিকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হবে তাদের প্রশাসনিক কাজে দক্ষ হতে হবে। এবং তারা সমস্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা তার উপরেই তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে।
২) মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর সেই জায়গাতেই হবে যেখানে কনস্টেবল পদে কর্মী নিয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে।
৩) এক্ষেত্রে সুযোগ তারাই পাবেন যাদের নাম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করবেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অর্পিত থাকবে জেলার পুলিশ সুপারের উপর। যে থানা এলাকায় বর্তমানে ভয়েন্টিয়ার পদে চাকরি করছেন সেই থানার ও.সি বা এস.ডি.পি.ও এর রিপোর্ট এর উপর তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী যতই রাজ্যের জন্য যত ভালো কাজই করুন না কেন বিরোধী পক্ষের দলনেতাদের চরিত্র ই হয়ে দাঁড়িয়েছে তার নিন্দা করা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাদের করা নিন্দার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই নিজের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তবে তার নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ঠিক কবে থেকে কার্যকর হবে সেই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে খুব শীঘ্রই এই নিয়োগের বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে উত্তর মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।