পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রাজ্যের বিবাহিতা, অবিবাহিতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা সকল মহিলাদের জন্য লক্ষীর ভান্ডারের চেয়েও বড়ো এক প্রকল্প চালু করা হল। রাজ্যের যে সব মহিলারা এই প্রকল্পের আওতায় নিজেদের নাম নথিভুক্ত করবেন তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো এক ধরনের নয় বরং তিন তিনটি ধরনের আর্থিক সুবিধা লাভ করবেন। মূলত পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বেকার মহিলাকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তোলার জন্যই আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই নতুন প্রকল্প চালু করেছেন। ইতিমধ্যেই তিনি আমাদের রাজ্যের বেকার মহিলাদের কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করার জন্য লক্ষীর ভান্ডার নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে মাসে ভাতা দিচ্ছেন। যা দিয়ে এতদিনে বহু বেকার মহিলারা ছোটো খাটো ব্যাবসা করে কিছুটা হলেও আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন।
তবে লক্ষীর ভান্ডারের মাধ্যমে রাজ্য সরকার প্রত্যেক বেকার মহিলাকে প্রতি মাসে যে ৫০০-১০০০ টাকা করে ভাতা দিচ্ছেন তা দিয়ে আজকালকার অগ্নিমূল্যের বাজারে আর কিই বা ব্যাবসা করবেন মহিলারা। আর করলেও বা সেই ব্যাবসা থেকে তাদের কতটুকুই বা ইনকাম আসবে। আর সেই কারনেই আজ আমরা যে প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি সেটির সন্বন্ধে প্রত্যেকটি মহিলারা জেনে রাখা উচিত। কারন এই প্রকল্প থেকে রাজ্যের মহিলারা লক্ষীর ভান্ডারের চেয়েও অনেক গুন বেশি আর্থিক সুবিধা লাভ করবেন। যা দিয়ে তারা আরও বড়ো কোনো ব্যাবসা করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন। বাংলার মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলতে বেশ কিছু বছর আগেই আমাদের রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছিলেন। যার নাম হল “জাগো প্রকল্প”। এই প্রকল্প নতুন নয়। বেশ কিছু বছর আগেই সালে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। সুতরাং সেই সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই প্রকল্প চলে আসছে। এই প্রকল্পের আওতায় এসে ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের সকল প্রকার বেকার মহিলাদের একটা বড়ো অংশ আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পেরেছেন। এবং ভবিষ্যতে আরও বহু মহিলা এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে হয়তো আমাদের রাজ্যের অনেক মহিলাই পরিচিত তবে যারা এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বিষয়ে অবগত নন বা জানলেও সেভাবে বিশদে কিছু জানেন না তাদের জন্য আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি খুবই উপকারী হতে চলেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই “জাগো প্রকল্প” এর বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।
“জাগো প্রকল্পের” মাধ্যমে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
“জাগো প্রকল্পে” নিজের নাম নাম নথিভুক্ত করলে আপনি এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে সব সুবিধা গুলি লাভ করবেন সেগুলি হল-
১) এই প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রত্যেক মহিলা খুবই সামান্য সুদে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋন লাভের সুবিধা পাবেন। সেই সঙ্গে বছর বছর ৫,০০০ টাকা করে ভাতাও পাবেন।
২) এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার পর প্রত্যেক মহিলাকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে যার মাধ্যমে তারা সকলে ২ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য বীমা পাবেন।
“জাগো প্রকল্পের” জন্য আবেদন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকা দরকার?
এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে হলে একজন মহিলার যে সব যোগ্যতা গুলি থাকা আবশ্যিক সেগুলি হল-
১) আবেদনকারী মহিলাকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২) আবেদনকারী মহিলাকে অবশ্যই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একজন সদস্য হতে হবে এবং সেই গোষ্ঠীটিকে অন্তত পক্ষে ১ বছর সক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকতে হবে। তবেই সেই গোষ্ঠীর আওতায় থাকা মহিলা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন নচেৎ নয়।
৩) এছাড়াও আবেদনকারী মহিলাকে এমন এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হতে হবে যে গোষ্ঠীর অন্তত পক্ষে ৬ মাসের পুরনো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেই অ্যাকাউন্টে কমকরে ৫,০০০ টাকা ব্যালেন্স থাকতে হবে। তবেই সেই গোষ্ঠীর আওতায় থাকা মহিলা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন নচেৎ নয়।
৪) এছাড়াও যে সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে টার্ম লোন বা ক্রেডিট লিমিটের সুবিধা রয়েছে সেইসব গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারাই কেবলমাত্র এখানে আবেদন করতে পারবেন। বাকিরা নন।
৫) এছাড়াও যে সব স্বনির্ভর গোষ্ঠী কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হয় কেবলমাত্র সেইসব গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারাই এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। পুরুষ দ্বারা পরিচালিত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারা কোনো ভাবেই এখানে আবেদনের জন্য যোগ্য নন।
৬) এছাড়াও যে সব স্বনির্ভর গোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত কোনো দিন ব্যাঙ্ক থেকে কোনো প্রকার ঋন নেননি সেই সব গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না।
কিভাবে আবেদন করতে হবে?
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে “জাগো প্রকল্পের” মাধ্যমে দেওয়া সুবিধা গুলি লাভ করার জন্য আবেদনকারীরা অনলাইন এবং অফলাইন দুই ভাবেই আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনের মাধ্যমে যেভাবে আবেদন করতে হবে তা হল-
১) প্রথমে এই প্রকল্পের অনলাইন পোর্টাল https://www.shgsewb.gov.in/shgadmin/home এ প্রবেশ করতে হবে।
২) এরপর সেখানে প্রয়োজন মতো তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
৩) এবং তারপর যাবতীয় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট করে দিলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
অন্যদিকে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে সে যেই ব্লকের বাসিন্দা সেই ব্লক অফিসে গিয়ে সে যেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সেই গোষ্ঠী সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জমা করে আবেদন করতে হবে।
এছাড়াও ইচ্ছুক ও যোগ্য মহিলারা ৭৭৭৩০০৩০০৩ এই হেল্প লাইন নম্বরের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদেরকে যেভাবে আবেদন করতে হবে তা হল-
১) প্রথমে উপরিউক্ত ফোন নাম্বারে একটি মিসড কল দিতে হবে।
২) তারপর সেই নম্বর থেকে আপনি যে নম্বরের মাধ্যমে মিসড কল করেছিলেন সেটিতে জাগো প্রকল্প কেন্দ্র থেকে ফোন করা হবে।
৩) এরপর আপনাকে সেই ফোন কলের মাধ্যমেই আপনি যেই গোষ্ঠীর সদস্য সেই গোষ্ঠীর এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আবেদন করার সময় যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) আধার কার্ড।
২) ভোটার কার্ড।
৩) স্বনির্ভর গোষ্ঠী সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যের প্রমান পত্র।
৪) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস।
৫) রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
কিভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে?
আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সমস্ত কিছু প্রমান পত্র খতিয়ে দেখে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তাদেরকে এই প্রকল্পের অন্তর্গত যাবতীয় সুবিধা গুলি প্রদান করা হবে।
কতদিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে?
“জাগো প্রকল্পে” আবেদন প্রক্রিয়া বর্তমানে চলছে। এবং এর কোনো রকম শেষ সময় সীমা ধার্য্য করা হয়নি। অর্থাৎ আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী যেদিন খুশি আবেদন করতে পারবেন।