দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রাইমারি থেকে শুরু করে আপার প্রাইমারি ও হাইস্কুলে প্রচুর পরিমাণে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু স্কুলের শিক্ষক এর অভাবে প্রায় বন্ধের মুখে পড়ে গিয়েছে। আবার অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে চতুর্থ শ্রেণীর(Group-D) কর্মীরা স্কুলের শিক্ষকের অভাব থাকায় ক্লাস নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে একটি সমীক্ষা চালানো হয় কোথায় কত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে সেই ব্যাপারে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের প্রায় 1 লক্ষ 16 হাজার শিক্ষক পথ ফাঁকা রয়েছে।
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের হিসেব করে দেখতে গেলে প্রায় দশ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী d.el.ed ও b.ed ট্রেনিং করে বসে আছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিপুল পরিমাণ এর শূন্য পদ রয়েছে। রাজ্য সরকার একের পর এক নতুন নতুন প্রকল্প চালু করেছে কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের তেমন কোন মাথা ব্যাথা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে প্রাইমারি বা আপার প্রাইমারি বা হাই স্কুলের যেকোন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হলে তা কোন না কোন ভাবে আইনি জটিলতার কবলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে ইউনেস্কো আমাদের সমগ্র ভারতবর্ষের উপর একটি সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষা করা হয়েছে প্রতিটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা এবং শিক্ষকের সংখ্যার উপরে। ইউনেস্কো প্রকাশিত সংস্থাটি যে সমীক্ষা করেছিল তার নাম ছিল নো টিচারস, নো ক্লাস’ এখানে দেখা যাচ্ছে সমগ্র ভারতবর্ষে প্রায় 11 লক্ষেরও বেশি শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। যার মধ্যে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক নিয়োগের শূন্যপদের নিরিখে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। যেখানে মোট শূন্যপদ রয়েছে 1 লক্ষ 16 হাজার। আমাদের দেশে এখনো এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র একটি শিক্ষক রয়েছে। শূন্যপদের নিরিখে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে তৃতীয় স্থানে, প্রথম স্থানে রয়েছে উত্তর প্রদেশ ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহার। এনসিটির নিয়ম অনুযায়ী প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারিতে প্রতি 30 জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রতি 40 জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষকের প্রয়োজন।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে মোট স্কুল রয়েছে 97828 টি। যেখানে সব মিলিয়ে মোট শূন্যপদ রয়েছে 1 লক্ষ 16 হাজারের বেশি। এই বিপুল পরিমানের শিক্ষকের ঘাটতির জন্য দিনের পর দিন শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে আরও দেখা যাচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা বেশি। এই বিপুল পরিমান শিক্ষকের ঘাটতি মেটানোর জন্য 2022 সালে প্রাইমারি ও নতুন করে SLST শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে এমনটাই অনুমান করা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পথে বসে চাকরি প্রার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। দেখা গিয়েছে এসএসসি পাস করা চাকরিপ্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছেন না অথচ ফেল করা প্রচুর চাকরিপ্রার্থী অসৎ উপায়ে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে চাকরিপ্রার্থীরা পথে নেমে আন্দোলন করছে এবং তারা তাদের দাবি ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করছে।
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন- ইতিমধ্যে আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন রাজ্যে প্রতিবছরই শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য পরীক্ষা নিতে হবে। তবে রাজ্যে প্রচুর শূন্য পদ রয়েছে, কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের কোন উদ্যোগ দেখাচ্ছেনা রাজ্য সরকার। তিনি আরো বলেন আমরা জোরালো ভাবে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, প্রতিবছর রাজ্যে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষক শিক্ষা কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
তবে যতদূর জানা গিয়েছে 2022 এর জুন-জুলাই মাসের মধ্যেই 2017 টেট পাস করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দিতে চাইছে রাজ্য। 2017 এর প্রাইমারির নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে রাজ্যের তরফ থেকে আবারও 2022 এর নতুন করে প্রাইমারি টেট পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তবে জানা যাচ্ছে রাজ্যে খুব শীঘ্রই আবারো রাজ্যের নতুন করে প্রাইমারি টেট ও SLST শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে খুব তাড়াতাড়ি। আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গের প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি বা হাই স্কুলের শিক্ষক হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার প্রস্তুতি চালিয়ে যান।