বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে এতদিন পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাকে জব্দে ফেলার জন্য বিভিন্ন ভাবে বহু বিক্ষোভ আন্দোলন মামলা মোকদ্দমা করা হল। কিন্তু তার পরেও যখন রাজ্য সরকারকে কোনো ভাবেই ঠিকঠাক মতো চাপে ফেলা গেলনা তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকারি কর্মীরা এক নতুন ফন্দি আঁটলেন রাজ্য সরকারকে চাপে ফেলার জন্য। রাজ্য কর্মী সংগঠনের একাংশের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন যে এবারে আর গোনা দিনে নয় লাগাতার ধর্মঘটের পথকেই বেছে নেবেন তারা। কিন্তু সেই ধর্মঘট কি ধরনের হতে চলেছে? কি উপায়ে রাজ্য সরকারকে ঘায়েল করতে চাইছেন রাজ্য কর্মী সংগঠনের সদস্যরা।
রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের ২৮ টি সংগঠন তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার অনুমতিতে গত ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল চালিয়েছেন। আর এই বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে সেদিন থেকে শুরু করে কিছুদিন আগে পর্যন্তও তারা কলকাতা শহিদ মিনারের সামনে ধর্নায় ছিলেন। এবং ধর্নায় বসার পাশাপাশি ২৪ ঘন্টা অনশন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। কিন্তু এতসব করার পরেও যখন রাজ্য সরকারকে কোনো ভাবেই চাপে ফেলা গেলনা তখন রাজ্য সরকারি কর্মীরা এবার তীব্র আন্দোলনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন। আগামী ১৮ ই মার্চ থেকে তারা ডিজিটাল স্ট্রাইক পালন করার কথা ঘোষণা করেছেন।
তারা জানিয়েছেন যে আগামী ১৮ ই মার্চ থেকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অফিস টাইমের পর তারা আর কোনো ভাবেই পার্সোনাল ফোন বা কম্পিউটারের ডেটা ব্যাবহার করে নিজেদের ব্যাক্তিগত কাজের বাইরে কোনো সরকারি কাজ করবেন না। যেমন অফিস ছুটির পর যদি অফিসের কোনো অনলাইন মিটিং থাকে তাহলে তাতে তারা কোনো ভাবেই অংশগ্রহণ করবেন না। এমনকি অফিসের যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্ৰুপের সাথে তারা যুক্ত রয়েছেন সেই গ্ৰুপ থেকেও তারা বেরিয়ে যাবেন। তাদের এইরুপ কার্যকলাপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে কারন একটাই আর তা হল বর্তমানে যে কোনো অফিসিয়াল কাজ তা সে সরকারি হোক বা বেসরকারি বেশীরভাগটাই হয় অনলাইনের মাধ্যমে। তাই সরকারি কর্মীরা যদি অফিস টাইমের পর অফিসের ওয়েবসাইটে লগইন না করেন অর্থাৎ ডিজিটাল স্ট্রাইক পালন করেন তাহলে রাজ্য সরকারের ২৪ ঘন্টার পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটবে।
যদিও ইতিমধ্যেই কিছু দিন আগেই রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে একদিনের ধর্মঘট পালন করেছেন। কিন্তু তাতেও মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে কোনো রকম বদল হয়নি। উল্টে নবান্নের তরফ থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের করা এই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী যে সব সরকারি কর্মীরা ওইদিন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেছেন অর্থাৎ অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন তাদের প্রত্যেককে শোকজ নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়াকরন শুরু করা হয়েছে।
এছাড়াও ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে এই ধরনের ধর্মঘট করার পিছনে ঠিক কি কারন রয়েছে সেটা যদি কোনো সরকারি কর্মী প্রমান করতে না পারেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেবে রাজ্য সরকার। যেমন তার বেতন কেটে নেওয়া হবে এমনকি তার গ্ৰ্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত সুবিধা থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হবে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো ভাবেই হার মানতে করতে রাজি নন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। আগের মতো এখনও তাদের দাবি একটাই যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা বর্তমানে যে ৩৮% DA এর সুবিধা ভোগ করছেন সেই একই সুবিধা অবিলম্বে তাদের ক্ষেত্রেও কার্যকর করতে হবে। আর যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাদের বক্তব্য এবারে তারা একটানা ১৪ দিন ধর্মঘট পালন করবেন। আর তার জেরে টানা এতো গুলো দিন ধরে যখন রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল কাজে ব্যাঘাত ঘটবে তখনই রাজ্য সরকার যথেষ্ট চাপের মুখে পড়বে। আর বাধ্য হবে তাদের বকেয়া DA মিটিয়ে দিতে। এই ১৪ দিনের ধর্মঘট পালন করার সিদ্ধান্ত আপাতত রাজ্য কর্মী সংগঠনের একাংশের সদস্যরা নিয়েছেন তবে তা কার্যকর করা হবে কিনা বা করলেও তা কবে থেকে করা হবে তা নিয়ে সংগঠনের বাকি অংশের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। আর এই ভোটের ডিউটি পালন করেন আমাদের রাজ্যের সরকারি কর্মী ও শিক্ষক শিক্ষিকারা। আর এবারে তাদের দাবি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য সরকার যদি রাজ্য সরকারি কর্মীদের দিয়ে ভোটের দায়িত্ব পালন করাতে চান তাহলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ও সরকারকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়া তারা কোনো ভাবেই ভোটের ডিউটি পালন করবেন না। কিন্তু একটা দুটো তো নয় একসাথে শতাধিক নির্বাচন কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা তো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এদিকে কিছু করারও নেই কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়া সরকারী কর্মীরা কোনো ভাবেই পঞ্চায়েত ভোটের ডিউটি পালন করবেন না একথা তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং এই পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্ব পালন ও বকেয়া DA পরিশোধ এই দুই এর নাগপাশে বন্দি হয়ে রাজ্য সরকারের যে বর্তমানে একেবারে বেহাল অবস্থা সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।