শেষ হয়েও হইল না শেষ। বকেয়া DA রাজ্য সরকার মেটাতে পারবে না এমনটাই আদালতে জানিয়ে দিল আজ, তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরাও তাদের সমস্ত বকেয়া DA সরকারের কাছ থেকে আদায় করেই ছাড়বে। রাজ্য সরকারের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই তাই রাজ্য সরকার সরকারি কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে ব্যর্থ এমনটাই আদালতে জানানো হয়েছে, তবে এই সমস্ত কথা ধোপে টিকবে না রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিয়ে তাদেরকে কেন্দ্রীয় হারে বেতন বৃদ্ধি করতে হবে এটাই নিয়ম।
ডি.এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া আজকের এই রায়ের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন লক্ষ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মচারী। কিন্তু আজও শেষ উদ্ধার হল না। ডি.এ মামলার ন্যায় বিচার পাওয়ার অপেক্ষার অবসান আজও ঘটল না। ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে তাদের অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল। এখন দাঁতে দাঁত চেপে তাদেরকে আগামী ১৫ ই মার্চ পর্যন্ত সুবিচারের আশায় প্রহর গুনতে হবে।
প্রাপ্য বকেয়া ডি.এ আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের হাইকোর্টে দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে তার অধীনস্থ প্রতিটি কর্মীকে ৩১ শতাংশ হারে ডি.এ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ না মেনে হাইকোর্টের দেওয়া সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। এই প্রসঙ্গে, রাজ্য সরকার জানায় যে হাইকোর্টের দেওয়া রায় অনুযায়ী সকল রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩১ শতাংশ হারে ডি.এ মেটাতে হলে রাজ্য সরকারের মোট ৪১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা খরচ হবে। আর একবারে এই পাহাড় প্রমান খরচের ভাড় বহন করা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে সরকারের এই বক্তব্য মেনে নেননি রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের আইনজীবী ফিরদৌস সামিম। রাজ্য সরকারের এইরুপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন যে বকেয়া ডি.এ মেটাতে হলে রাজ্য সরকারের মাথায় বিশাল অঙ্কের খরচের বোঝা চাপবে একথা ঠিক, তবে সঠিক সময় মতো ডি.এ পাওয়া টাও তো রাজ্য সরকারি কর্মীদের নৈতিক অধিকার। তাই রাজ্য সরকারকে যত শীঘ্র সম্ভব সকল কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া ডি.এ মিটিয়ে দেওয়া উচিত।
গত ২০২২ সালের ৫ ই ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ডি.এ মামলার শুনানি হওয়ার পর গত ১৪ ই ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেদিন এই মামলার ডিভিশান বেঞ্চে হৃষিকেশ রায়ের সঙ্গে দীনেশ মাহেশ্বরীর জায়গায় দীপঙ্কর দত্ত নামে যে বিচারপতি ছিলেন তিনি আদালত চত্বরে রাজ্য কর্মী সংগঠনের হয়ে উপস্থিত থাকা লোকজনেদের আদালত সম্পর্কে করা কিছু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য শুনে এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে তিনি সেই মূহুর্তে সেদিন এই DA মামলার শুনানি বাতিল করে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন আজ অর্থাৎ ১৬ ই জানুয়ারি। কিন্তু আজও এই ডি.এ মামলাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারের পেশ করা সমস্ত হলফনামায় বেশ কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকার কারণে এই মামলার শুনানি বাতিল করে দেওয়া হয়। এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে টানা দু’মাস পর অর্থাৎ ১৫ ই মার্চ। যার ফলে আজ ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে লক্ষ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মীর অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল।
তবে যাই হোক রাজ্য সরকারকে বকেয়া সমস্ত DA মেটাতেই হবে এবং রাজ্য সরকার যে হারে বর্তমানে DA দিচ্ছে সেটা অন্যান্য সমস্ত রাজ্যের তুলনায় যথেষ্ট কম। দ্রব্যমূল্য বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর করে DA বৃদ্ধি করা হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত রাজ্যের DA মিটিয়ে দিয়ে DA পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে এবং যার দরুন রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি পাবে এবং সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারকেও সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিয়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় হারে DA দিতে হবে এটাই নিয়ম। রাজ্য সরকার একের পর এক নতুন নতুন প্রকল্প করতে পারছে কিন্তু সরকারি কর্মীদের বেলায় রাজ্যের কাছে টাকা নেই, এটা রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে কোনমতেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।