আমাদের রাজ্যে বেকারত্বের গ্ৰাফ যেভাবে দিনে দিনে ক্রমশ উর্ধ্বগামী হচ্ছিল তাতে করে বেশিদিন এভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই এমন এক দিন আসত যেদিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতো। তাই এমন দিনের সন্মুখীন যাতে আমাদের কাউকে হতে না হয় সেই কারণে আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বেকারত্বের হার কমাতে বছর চার পাঁচেক আগেই “উৎকর্ষ বাংলা” নামে একটি কর্মমুখী প্রকল্প চালু করেছেন। এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যের বহু যুবক যুবতী নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও এই মাত্র কয়েক মাস আগে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের এই ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার কমাতে “আমার কর্মদিশা” নামে আরও একটি কর্মমুখী প্রকল্প চালু করেছেন। যার মাধ্যমে রাজ্যের নামসই থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত পর্যন্ত সকল বেকার চাকরিপ্রার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে রাজ্য সরকারের দাবি।
তবে শুধু এখানেই থেমে না থেকে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে “স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপ” নামে একটি প্রকল্প চালু করেছেন। এই প্রকল্পের আওতায় থাকা রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি নয়, দুটি নয় একসঙ্গে মোট তিনটি সুবিধা লাভ করবেন। অর্থাৎ এই প্রকল্পে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করলে তারা যেমন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন তেমনি প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতি মাসে সরকারের তরফ থেকে ৫০০০ টাকা করে স্টাইপেন্ড ও পাবেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণ শেষে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তরে তাদেরকে কাজে নিযুক্ত করার ব্যাবস্থাও করবে রাজ্য সরকার। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপের বিষয়ে আরও বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন?
স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের সুবিধা লাভ করার জন্য নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হলে একজন আবেদনকারীর যা যা যোগ্যতা থাকা দরকার সেগুলি হল-
১) আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২) এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনো সরকারি কলেজ থেকে যে কোনো বিভাগে কমপক্ষে ৬০% নম্বর পেয়ে গ্ৰ্যাজুয়েশান পাস করে থাকতে হবে।
৩) যে সব পড়ুয়ারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গ্ৰ্যাজুয়েশান কোর্সে ভর্তি না হয়ে ITI কোর্স করেছেন তারাও এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৪) এখানে আবেদন করতে হলে একজন আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮-৪০ বছরের মধ্যে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে?
এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করার পর একজন আবেদনকারী যে সব সুবিধা লাভ করবেন সেগুলি হল-
১) এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য কোনো আবেদন মূল্য লাগছে না অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করা যাবে।
২) এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ট্রেনিদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে।
৩) প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেক ট্রেনিকে সরকারের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।
৪) এবং এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ট্রেনিদের প্রশিক্ষণ শেষে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির সুযোগ করে দেবে রাজ্য সরকার। তবে এক্ষেত্রে যে সব ট্রেনিরা খুব ভালো করে কাজ শিখবেন তাদেরকে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্ৰাধিকার দেওয়া হবে।
৫) এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর ৬০০০ জন বেকার যুবক যুবতীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।
এই প্রকল্পে কিভাবে আবেদন করতে হবে?
স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তার জন্য যা যা পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে সেগুলি হল-
১) প্রথমে এই প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wb.gov.in এ প্রবেশ করতে হবে।
২) এরপর সেখান থেকে স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপ লিঙ্কে ক্লিক করলে এই প্রকল্পের আবেদন পত্রটি আসবে।
৩) এরপর সেই আবেদন পত্রে নিজের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জেন্ডার, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফোন নম্বর, ইমেল আইডি ইত্যাদি লিখে ফর্ম টিকে ফিলাপ করে ফেলতে হবে।
৪) এরপর আপনার নিজের যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্টস সহ, এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো ও একটি সিগনেচারের ছবি তুলে স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
কি কি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে?
আবেদন পত্রের সঙ্গে যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা বার্থ সার্টিফিকেট।
২) আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড।
৩) সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কসীট ও সার্টিফিকেট।
৪) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
আবেদনের শেষ তারিখ কত?
স্টুডেন্টস ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি পাওয়ার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া অনেকদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং এর কোনো শেষ সময় সীমা নেই। আপনারা যেদিন খুশি এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন।