আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও পর্যন্ত এমন বহু দুঃস্থ পরিবার রয়েছে যে সব পরিবারের পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার কারনে মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বিভিন্ন ধরনের দিন মজুরের কাজ করতে বাধ্য হয়। সেই সকল দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদেরকে স্কুল মুখী করে নিজেদের লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যের রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বহু ধরনের স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। যাতে সেই স্কলারশিপের মাধ্যমে পাওয়া অর্থের সাহায্যে সেই সকল দুঃস্থ পরিবারের ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষার জগতে নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর ঠিক সেই ভাবেই আমাদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও এ রাজ্যের প্রতিটি তপশিলী জাতি, উপজাতি সহ বাকি সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের লেখাপড়ার বিষয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে একাধিক স্কলারশিপ ও প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আর আজ আমরা তেমনই এক স্কলারশিপের বিষয়ে আলোচনা করতে হাজির হয়েছি।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তপশিলী জাতি, উপজাতি সহ বাকি সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার জগতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে চালু করা স্কলারশিপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ”। এই স্কলারশিপ একেবারেই নতুন নয়। বেশ কিছু বছর আগেই আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে এই স্কলারশিপ কার্যকর করা হয়েছিল। সেই সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের রাজ্যের বহু তপশিলী জাতি, উপজাতি সহ বাকি অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীরা এই স্কলারশিপের সুবিধা লাভ করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এমন অনেকে আছে যারা এই স্কলারশিপের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা, আবেদন পদ্ধতি এই সকল বিষয় গুলি সঠিক ভাবে না জানার কারণে এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন না। তাদেরকে এই স্কলারশিপ সন্বন্ধীয় যাবতীয় বিষয় সবিস্তারে জানাতেই রইল আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন। নীচে এই বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য আলোচনা করা হল।
“শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ” এর জন্য আবেদন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে ছাত্র ছাত্রীদের নিম্নলিখিত যোগ্যতা গুলি থাকতে হবে। যেমন-
১) আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২) আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই তপশিলী জাতি, উপজাতি বা অন্য যে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত হতে হবে।
৩) এক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত যে কোনো সরকার স্বীকৃত বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীর মধ্যে যে কোনো একটি শ্রেনীতে পাঠরত অবস্থায় থাকতে হবে।
৪) এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনুদান পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ২.৫ লক্ষ টাকার নীচে হতে হবে।
৫) এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে আবেদনকারীকে আগের বছরের ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করে থাকতে হবে। তবেই সে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে নচেৎ নয়।
৬) এক্ষেত্রে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি ছাত্রাবাসে থেকে লেখাপড়া করে তাহলে সে এই স্কলারশিপের সুবিধা পাবে না।
৭) এমনকি কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার প্রদত্ত অন্য কোনো স্কলারশিপের আওতায় থেকে থাকে তাহলে সে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
“শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ” এর আওতায় কোন শ্রেনীর পড়ুয়াদের কত টাকা করে দেওয়া হয়?
শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপের মাধ্যমে লেখাপড়ার মান অনুযায়ী স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যে শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের যত টাকা করে দেওয়া হয় তা হল-
১) এই স্কলারশিপের আওতায় পঞ্চম শ্রেনী থেকে শুরু করে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরত অবস্থায় থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের বছরে ৭৫০ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
২) এবং অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের এই স্কলারশিপের আওতায় বছরে ৮০০ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে দেওয়া টাকা প্রত্যেক আবেদনকারী যোগ্য পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জমা করে দেওয়া হয়।
“শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ” পাওয়ার জন্য কিভাবে আবেদন করতে হবে?
শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে ইচ্ছুক ছাত্র ছাত্রীরা অনলাইন এবং অফলাইন দুই রকম ভাবেই আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনের মাধ্যমে যেভাবে আবেদন করতে হবে তা হল-
১) সবার আগে শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.anagrasarkalyan.gov.in এ প্রবেশ করতে হবে।
২) তারপর সেখান থেকে Scholarship Application for class V-VII Students লিঙ্কে ক্লিক করতে হবে।
৩) এরপর যে নতুন পেজ খুলবে সেখানে User Id, Password এবং ক্যাপচা কোডটি সঠিক ভাবে বসিয়ে Login করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে এই User Id ও Password আবেদনকারী ছাত্র ছাত্রীদের তার নিজ নিজ স্কুল থেকে নিতে হবে।
৬) Login করার পর অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম আসবে সেখানে নির্দিষ্ট স্থান অনুযায়ী প্রয়োজন মতো তথ্য দিয়ে ফর্মটিকে ফিলাপ করতে হবে।
৭) এরপর যাবতীয় জরুরি ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট করে দিলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
অন্যদিকে অফলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হলে আবেদনকারী পড়ুয়াকে যেভাবে আবেদন করতে হবে তা হল-
১) এক্ষেত্রে আবেদনকারী পড়ুয়াকে তার নিজের স্কুলে গিয়ে সেখান থেকে এই স্কলারশিপের আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
২) তারপর সেটিকে সঠিক ভাবে পূরণ করে তার সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার মার্কসীট ও সার্টিফিকেট সহ বাকি সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর জেরক্স যুক্ত করে আবার নিজ নিজ স্কুলেই জমা দিতে হবে। তাহলেই আবেদন হয়ে যাবে।
আবেদন পত্রের সঙ্গে কোন কোন ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
“শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ” এর আওতায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদন পত্রের সঙ্গে যে সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি জমা দিতে হবে সেগুলি হল-
১) আধার কার্ড।
২) ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবুকের প্রথম পৃষ্ঠা।
৩) জাতিগত সংশাপত্র।
৪) স্কুল সার্টিফিকেট।
৫) রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট।
৬) আগের ক্লাসের ফাইনাল পরীক্ষার মার্কসীট।
৭) ইনকাম সার্টিফিকেট।
৮) রিসেন্ট তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় চালু হওয়া এই “শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ” ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বহু দুঃস্থ অনগ্ৰসর শ্রেনীর পড়ুয়াদের শিক্ষার জগতে এগিয়ে গিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এবং আগামী দিনেও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই স্কলারশিপ প্রদানের মাধ্যমে এ রাজ্যের আরও এমনই অনেক অনগ্ৰসর শ্রেনীর পড়ুয়াকে শিক্ষিত করে তুলে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করা হবে বলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য রয়েছে বিশাল বড় সুখবর। যারা ২০২২ এ প্রাইমারি টেট…
পশ্চিমবঙ্গ সরকার পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনসাধারণের জন্য একের পর এক নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নিয়ে…
খাদ্য দপ্তরের তরফে বিরাট বড় কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জানা গিয়েছে সব…
প্রাইমারি টেট পরীক্ষার্থীর জন্য বিশাল বড় একটি সুখবর। অবশেষে যারা যারা প্রাইমারি টেট পাস করে…
দীপাবলীর আগেই সরকারি কর্মীদের DA ও পেনশন দুটোই দ্বিগুণ বাড়তে চলেছে। সরকারি কর্মী ও পেনশন…
এতদিন পর্যন্ত আমাদের রাজ্যের সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যার…