এবার থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করার ক্ষেত্রে আসতে চলেছে একটি নতুন নিয়ম। আজ সকালে নবান্নে সংঘটিত এক বৈঠকে একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন যে আমাদের রাজ্যের সেইসব মহিলারা যারা বেকার ও আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র তাদের আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকার কারণে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারছেন না আজকের এই ঘোষণা তাদের জন্য।
যে সমস্ত মানুষ চাকরি করেন বা অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তারাও এবার থেকে এই প্রকল্পে আবেদনের সুযোগ পাবেন এমনটাও জানানো হয়েছে।
চলতি মাসের ১ লা তারিখ থেকেই সারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গিয়েছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। এবং এই ক্যাম্প চলবে আগামী ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত। আর প্রত্যেক দিনই এই ক্যাম্প থেকে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষীর ভান্ডার সহ মোট ২৭ টির ও বেশি প্রকল্পের সুবিধা লাভ করে চলেছেন। তবে অন্যান্য প্রকল্প গুলির মাধ্যমে মানুষ সুষ্ঠ ভাবে পরিষেবা লাভ করলেও সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ক্ষেত্রে।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা দেখা দিচ্ছে আধার কার্ড এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে। আমাদের রাজ্যে এখনও এমন বহু মহিলা আছেন যাদের আধার কার্ড এবং স্বাস্থ্যকার্ড নেই। আর সেই কারণেই বারবার দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে গিয়েও তাদেরকে আবেদন না করে নিরাস হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হচ্ছে যার ফলে তারা এই প্রকল্পের সুবিধা লাভ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বারবার।
আর এই খবর আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছতে তিনি মনের দিক দিয়ে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি মনে মনে এটাই ভাবতে শুরু করেছিলেন যে তিনি যেখানে বিশেষ করে রাজ্যের মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প চালু করেছেন সেখানে শুধুমাত্র আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকার কারণে রাজ্যের মহিলারা এই সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকবেন? এটা তো কোনো ভাবেই চলতে দেওয়া যায় না।
আর ঠিক সেই কারনেই তিনি লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করার ক্ষেত্রে একটি নতুন পরিবর্তন এনেছেন। এবং আজ সকালে নবান্নে সংঘটিত এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি এই নতুন পরিবর্তনের কথা ঘোষণাও করে দিয়েছেন। আর এই নতুন পরিবর্তন টি হল এই যে এখন থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করার জন্য আর আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকাটা আবশ্যিক নয় অর্থাৎ যেসব মহিলাদের আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই তারাও এখন থেকে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। এবং আবেদন পত্র জমা পড়ার পর অন্যান্য সব মহিলারা যাদের আধার কার্ড বা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে তাদের মতো প্রত্যেক মাসে মাসে ৫০০-১০০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে যেতেন কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। যা দিয়ে তারা ছোটো খাটো ব্যাবসা করে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হতে সক্ষম হবেন।
কিন্তু বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে তাতে করে এই ৫০০/১০০০ টাকাতে আর কত টুকুই বা কি হবে? তাই কিছু দিন আগে এক বৈঠকে মান্যনীয়া মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তই নেন যে এবার থেকে তিনি সাধারণ শ্রেনীর মহিলাদের লক্ষীর ভান্ডারের মাধ্যমে প্রাপ্য টাকার পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা এবং তপশিলী জাতি, উপজাতিদের টাকার পরিমাণ ১০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪০০ টাকা করা হবে। এবং সেই সঙ্গে তিনি এই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আর এক নতুন মোর আনতে চলেছেন বলেও সেদিন সেই বৈঠকে জানিয়েছেন।