কয়েক বছর হল আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা প্রতিটি সরকারি ব্যাঙ্কের শাখা অফিস গুলির কাজের চাপ কমানোর জন্য দেশ জুড়ে অসংখ্য CSP(Customer Service Point) অর্থাৎ গ্ৰাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সাধারণত আমাদের আশেপাশে যে সব CSP গুলি আমরা দেখতে পাই তার মধ্যে বেশিরভাগই মূলত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কের হলেও এগুলি ছাড়াও আরও অন্যান্য সব ব্যাঙ্কেরও CSP খোলার নিয়ম আছে। ব্যাঙ্কের সাথে এই CSP এর কোনো তফাৎ নেই। এখানেও ব্যাঙ্কের মতোই টাকা তোলা, টাকা জমা দেওয়া, পাসবুক আপডেট, নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, ফিক্সড ডিপোজিট, ইত্যাদির মতো যাবতীয় কাজ হয়। যার দ্বারা একদিকে যেমন ব্যাঙ্ক গুলির কাজের চাপ কিছুটা হলেও হালকা হওয়ায় তারা কাস্টমারদের পরিষেবা দেওয়া ছাড়াও ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত আরও অন্যান্য সব কাজকর্ম নির্বিঘ্নে করতে পারেন তেমনি অন্যদিকে এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় বহু বেকার যুবক যুবতী নিজেদের কর্মসংস্থানের দিশা খুঁজে পেয়েছেন। তারা এই CSP খুলে তার মাধ্যমে প্রতিমাসে ২৫-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? আপনিও যত শীঘ্র সম্ভব এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে বেকারত্বের দশা থেকে মুক্তি দিন। নতুন বছরের শুরুতেই CSP খুলে মাসে মাসে মোটা টাকা ইনকাম করতে চাইলে কিভাবে কি করতে হবে তা জানাতে চাইলে এই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। নীচে এই CSP খোলার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল।
CSP নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স:-
CSP নিয়ে তার মাধ্যমে রোজগার করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই কোনো সরকার স্বীকৃত বোর্ড থেকে কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটারে বেসিক নলেজ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর হলে তবেই সে CSP নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে নচেৎ নয়।
CSP খোলার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র:-
CSP বা গ্ৰাহক পরিষেবা কেন্দ্র খুলে তার মাধ্যমে রোজগার করতে চাইলে নিম্নলিখিত জিনিস গুলি অবশ্যই থাকতে হবে। এবং সেগুলি হল-
• আবেদনকারীর নিজস্ব ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থাকতে হবে।
• সেই সঙ্গে ভালো Internet Connection থাকতে হবে।
• একটি ভালো ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার থাকতে হবে।
• পাস বুক আপডেট সহ আরও অন্যান্য সব কাজ করার জন্য একটি ভালো প্রিন্টার থাকতে হবে।
• এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জরুরি যেটা তা হল ২০০-২৫০ বর্গ ফুটের একটি স্থায়ী ঘর থাকতে হবে। তবে সেটা আবেদনকারীর নিজস্ব ঘর হলেও চলবে আবার ভাড়ার ঘর হলেও চলবে।
CSP এর মাধ্যমে হওয়া ইনকামের পরিমাণ:-
CSP খুললে তার দ্বারা প্রতিমাসে আপনার যে ইনকাম আসবে তা কিন্তু ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের মতো স্থায়ী সরকারি বেতন নয়। এখানে পুরো বিষয়টাই হচ্ছে কমিশন ভিত্তিক। এর অর্থ হল এইটাই যে এখানে আপনি যতবেশি কাজ করতে পারবেন তত বেশি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অর্থাৎ পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার নিজের উপর। আপনি যদি ধৈর্য্য ধরে মন দিয়ে ঠিকঠাক মতো কাজ করতে পারেন তাহলে আপনিই এর মাধ্যমে সরকারি চাকরির বেতনের সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এবারে তাহলে জেনে নিই কিভাবে কত টাকা কমিশন পাওয়া যাবে।
১) CSP এর মাধ্যমে টাকা জমা ও তোলা করলে Transaction পিছু CSP মালিককে ০.০৪-০.০৬% হারে কমিশন দেওয়া হয়।
২) CSP খুলে এর মাধ্যমে আপনি যদি সারাদিনে মোট ১ লক্ষ টাকার Transaction করেন তাহলে একদিনে আপনার ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হবে।
৩) ঠিক সেই ভাবেই আপনি যদি সারাদিনে মোট ২ লক্ষ টাকার Transaction করেন তাহলে আপনি একদিনে ৮০০-১০০০ টাকা রোজগার করতে পারবেন।
৪) এই টাকা তোলা ও জমা করার জন্য যা রোজগার হল তো হল। এর উপরে আরও বেশি পরিমাণ টাকা উপার্জন করতে চাইলে ব্যাঙ্কের আরও অন্যান্য সব কাজ যেমন নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসবুক আপডেট, ফিক্সড ডিপোজিট, ইনসিওরেন্স পলিসি ইত্যাদি করেও আপনি আরও বেশি পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অর্থাৎ মোটের উপর এটাই দাঁড়াচ্ছে যে এখানে কোনো স্থায়ী মাসিক বেতনের ব্যাবস্থা না থাকলেও আপনি যদি ধৈর্য্য ধরে মন দিয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে এখান থেকে আপনি চাকরির মতোই মাসিক মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
কিভাবে CSP খোলার অনুমতি পাওয়া যায়?
যে কোনো ব্যাঙ্কের CSP খুলতে হলে আমরা কিন্তু সরাসরি সেই ব্যাঙ্ক থেকে CSP খোলার অনুমতি কখনোই পাবো না। কারন এমনটা নিয়ম নেই। তার জন্য আপনাকে CSP প্রদানকারী কোম্পানির সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু কোন কোম্পানি কোন ব্যাঙ্কের CSP প্রদান করে তা জানবেন কিভাবে? তা তো আর আমাদের সকলের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে চিন্তা নেই সেই উপায়ও রয়েছে। আপনি যে ব্যাঙ্কের CSP খুলতে চান আপনার বাড়ির কাছাকাছি সেই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ বা মেইন অফিসে গিয়ে সেখানকার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যাঙ্কের CSP প্রদানকারী কোম্পানির সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন তারপর সেই কোম্পানির কাছে CSP নেওয়ার জন্য আবেদন করুন। এই আবেদন আপনারা অনলাইন এবং অফলাইন দুরকম ভাবেই করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আমরা আপনাদের অফলাইন আবেদন প্রক্রিয়াই সাজেস্ট করবো কারন অনেক সময় অনলাইনে প্রতারনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই তা এড়িয়ে চলাই ভালো।
CSP খোলার জন্য আবেদন করার পদ্ধতি:-
CSP খুলে তার মাধ্যমে রোজগার করতে চাইলে আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলি অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে। যেমন-
১) প্রথমে আপনি যে ব্যাঙ্কের CSP খুলতে চান আপনার বাড়ির কাছাকাছি সেই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ বা মেইন অফিসে গিয়ে সেখানকার ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করুন।
২) এরপর তার সাথে ভালো ব্যাবহার করে তাকে বুঝিয়ে বলুন যে আপনি যদি সেই ব্যাঙ্কের হয়ে CSP খোলেন তাহলে সেই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কি কি সুবিধা হবে এবং সেখানকার অন্যান্য স্টাফেদের কি কি সুবিধা হবে এই সব বিষয়ে।
৩) তারপর আপনার সব কথা শুনে ম্যানেজার যদি রাজি হন তাহলে তার থেকে সেই ব্যাঙ্কের CSP প্রদানকারী কোম্পানির নাম জেনে নিন।
৪) তারপর অনলাইনে সেই কোম্পানির নাম ধরে search করে সেখান থেকে ফোন নাম্বার ই-মেইল আইডি জোগাড় করে সেই কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে আবেদন করুন।
৫) এগুলো করা ছাড়াও আরও সহজ এক উপায় আছে CSP প্রদানকারী কোম্পানির নাম জানার। তা হল আপনি যে ব্যাঙ্কের CSP খুলতে চান সেই ব্যাঙ্কের কোনো CSP যদি আপনার ধারেকাছে থাকে তাহলে সেখানে গিয়ে সেখানকার মালিকের সঙ্গে কথা বলেও আপনি কোম্পানির নাম জেনে নিতে পারেন।
৬) তবে সে যদি আপনাকে কোম্পানির নাম বলতে রাজি না হয় তাহলেও কোনো অসুবিধা নেই। তখন দেখবেন ওই CSP এর ঘরের কোথাও একটা ওই কোম্পানির সার্টিফিকেট ঝোলানো থাকবে আপনার মোবাইলে তার একটি ছবি তুলে নিন।
৭) এরপর সেই অনুযায়ী অনলাইন থেকে সেই কোম্পানির ফোন নাম্বার ই-মেইল আইডি জোগাড় করে তার মাধ্যমে আবেদন করুন।
CSP প্রদানকারী কোম্পানি গুলির নাম:-
যে সব কোম্পানি গুলি CSP প্রদান করে থাকে সেগুলির নাম হল-
১) Reliance Payment Solution Limited
২) AISECT Limited
৩) Alankit Limited
৪) Easy Bill Private Limited
৫) CSE e Governance
৬) Unique Social Equality
৭) Pay Point India Pvt. Ltd.
CSP খুলে জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:-
CSP খুলতে হলে যেসব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি অবশ্যই থাকতে হবে সেগুলি হল-
ভোটার কার্ড (Voter Card)
প্যান কার্ড (Pan Card)
আধার কার্ড (Aadhar Card)
ব্যাংক একাউন্ট ডিটেলস (Bank Ac Details)
জায়গার কাগজপত্র (দলিল)
ভাড়ার ঘর হলে রশিদ।
পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট।
CSP খুলতে খরচ:-
CSP খুলতে হলে কিছু খরচ আছে এবং সেটা বেশ ভালো রকমেরই। এর জন্য আপনাকে সবার আগে ৫০০০/৭০০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর ল্যাপটপ বা কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, Wi-Fi মেশিন ইত্যাদি কিনতে হবে এবং সেই সঙ্গে নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকলে সেক্ষেত্রে মাসিক ভাড়ায় ঘর ভাড়া নিতে হবে। তবে খরচ কিছু হলেও মত দিন যাবে তত আপনার ইনকামের পরিমাণ বাড়বে বই কমবে না একথা বলা যেতে পারে।