রাজ্য সরকারি কর্মীদের DA মেটানো নিয়ে চাপে রাজ্য সরকার, সুখবর রাজ্য সরকারি কর্মীদের | WB Govt Job Employee

বকেয়া DA মেটানো নিয়ে চরম চাপের মুখে রাজ্য সরকার। অবিলম্বে রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া DA মিটিয়ে না দিলে পরিস্থিতি যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবলেই ভয় হচ্ছে। প্রথমবারের মতো গত ১৪ ই ডিসেম্বর  রাজ্য সরকারি কর্মীদের সুপ্রিম কোর্টে করা DA মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় পর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল গত ১৬ ই জানুয়ারি। মনে চরম রাগ ও ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মীরা মুখ বুজে তা মেনে নিয়েছিলেন। তাদের মনে কোথাও একটা সুপ্ত বিশ্বাস ছিল যে  ১৬ ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল তার রায় হয়তো তাদের পক্ষেই যাবে। আর সেই কারণেই তারা এতদিন পর্যন্ত শান্ত হয়ে সবকিছু সহ্য করছিলেন। কিন্তু ১৬ ই জানুয়ারি ও যখন এই ডি.এ মামলার কোনো ফয়সালা হল না অর্থাৎ ন্যায় বিচার পাওয়ার জায়গায় উল্টে তাদের অপেক্ষার সময়সীমা আরও দীর্ঘতর হয়ে গেল। তখন আর তারা শান্ত থাকতে পারলেন না। রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের ২৮ টি সংগঠন তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার অনুমতিতে গত ২৭ শে জানুয়ারি কলকাতার রাস্তায় নেমে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে কলকাতা পুরসভা পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিল চালিয়েছেন। আর এই বিক্ষোভ মিছিল শেষ করে সেদিন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত অর্থাৎ টানা ৯ দিন তারা কলকাতা শহিদ মিনারের সামনে ধর্নায় রয়েছেন। কিন্তু এইসব দেখেও এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ নেই। 

       উল্টে রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের করা এই বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্না বসাকে কটাক্ষ করে কলকাতা পৌরসভার চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এইরুপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন যে এই বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্নায় বসা এই সবই হল আসলে তৃনমূল সরকারের বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট সরকারের ষড়যন্ত্র। তারাই নাকি রাজ্য সরকারি কর্মীদের এইসব কিছু করতে মদত দিচ্ছে। ফিরহাদ হাকিমের এইরুপ মন্তব্য কানে পৌঁছনো মাত্রই যে ২৮ টি রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠন এই বিক্ষোভ মিছিল ও ধর্নায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারা এতটাই ক্রুদ্ধ হয়েছেন যে তারা এবারে এই ধর্নায় বসার পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘন্টা অনশন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেইসঙ্গে তারা এও জানিয়েছেন যে এই অনশনেও যদি কাজ না হয় অর্থাৎ এতেও  যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে রাজ্য সরকারের সামনে তা নিয়ন্ত্রনে আনার আর কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। 

      আশ্চর্যের বিষয় হলো একটাই। দেশ একটা কিন্তু সেখানকার এক একটা রাজ্যের সরকার এক এক রকমের। দীর্ঘ দু-বছর যাবৎ করোনা মহামারী চলার কারনে কেন্দ্রীয় সরকার তার অধীনস্থ কর্মীদের বকেয়া DA মেটাতে না পারলেও ২০২২ সালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতেই কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম পে কমিশন গঠন করে আগের ষষ্ঠ পে কমিশন অনুযায়ী দেওয়া ৩৪% DA এর উপর আরও ৪% বাড়িয়ে ৩৮% করেছেন। এখন আপাতত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ৬২ লক্ষ কর্মী এবং ৫২ লক্ষ পেনশন ভোগীরা এই সুবিধা ভোগ করছেন। আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মার্চ মাস থেকে অষ্টম পে কমিশন চালু হলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বর্ধিত DA এর পরিমাণ সপ্তম পে কমিশনের ৩৮% এর উপর আরো ৪% বেড়ে দাঁড়াবে ৪২% এ। তার ফলে সর্বনিম্ন বেতন প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বর্তমানে পাওয়া বেতনের উপর ৭২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বর্তমানে পাওয়া বেতনের উপর ২২৭৬ টাকা করে বাড়বে। 

        এছাড়াও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা সম্প্রতি ত্রিপুরার রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১২% ডি.এ বৃদ্ধি করেছেন। যার ফলে আগে যেখানে ত্রিপুরার রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডি.এ বা মহার্ঘ্য ভাতার পরিমাণ ছিল ৮% এখন তার উপর ১২% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০% এ। সুতরাং এই মুহূর্তে ত্রিপুরার রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশন ভোগীরা এই বর্ধিত ২০% ডি.এ বা মহার্ঘ্য ভাতার সুবিধা ভোগ করছেন। আর এই ডি.এ বাড়াতে গিয়ে ত্রিপুরা সরকারের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে মোট ১৪৪০ কোটি টাকা। অন্যদিকে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে স্ট্যালিন ও ওই রাজ্যের রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য বেতনের উপর আরও ৪% হারে ডি.এ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং তামিলনাড়ুর সরকারি চাকুরিজীবী ও পেনশন ভোগীরা মিলিয়ে মোট ১০ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী এই বর্ধিত ডি.এ এর সুবিধা ভোগ করছেন। 

      একদিকে যখন সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা এমনকি পশ্চিমবঙ্গেরও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ঠিকঠিক সময় মতো তাদের প্রাপ্য DA পেয়ে যাচ্ছন সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA আদায়ের জন্য এই যে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্ৰাম করতে হচ্ছে তাতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীরা এতটাই বেশি রেগে গিয়েছেন যে তারা আর নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করার অবস্থাতেই নেই। যদিও তাদেরকে একেবারেই দোষ দেওয়া যায় না। কারন বর্তমানে দৈনন্দিন ব্যাবহারিক জিনিসপত্রের দাম যেভাবে ক্রমশ উর্ধ্বগামী হচ্ছে তাতে এই একই পরিমাণ বেতনে সংসার চালাতে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন তারা। তাই তারা বাধ্য হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এইরুপ বিক্ষোভমূলক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এতেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে ভবিষ্যতে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে আর কি কি করতে চলেছেন আর ফলে রাজ্য সরকারের উপর যে কি ধরনের ঝড় বয়ে আসতে চলেছে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।


MORE NEWS: CLICK HERE

চাকরির সম্বন্ধীয় ও আরো অন্যান্য বিস্তারিত খবরা খবর পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল যুক্ত হন।
TELRGRAM CHANNEL:  CLICK HERE

Leave a Comment