দীর্ঘ দু-বছর যাবৎ বকেয়া DA আদায়ের লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহু মামলা মোকদ্দমা করার পরেও আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বকেয়া DA পেলেন না রাজ্য সরকারি কর্মীরা। আর তাই এখনও পর্যন্ত একের পর এক আন্দোলন করে চলেছেন রাজ্য কর্মী সংগঠনের সদস্যরা। রাজ্য কর্মী সংগঠনের সংগ্ৰামী মঞ্চ থেকে কখনো বিক্ষোভ মিছিল, কখনো অনশন কর্মসূচি, কখনো ডিজিটাল স্ট্রাইক, কখনো কর্ম বিরতির ডাক দেওয়া হচ্ছে ক্রমাগত। শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের দাবি একটাই কেন্দ্রীয় সরকারের হারে DA বাড়াতে হবে। আর যতদিন পর্যন্ত না দাবি পূরণ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তবে এতো বিক্ষোভ আন্দোলনের পরেও আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের এতটুকুও বদল হয়নি। সম্পূর্ণ ভাবে বকেয়া DA মিটিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা উপরন্তু বকেয়া DA আদায়ের উদ্দেশ্যে আন্দোলনরত রাজ্য সরকারি কর্মীদেরকে চোর বলেও সাব্যস্থ করেছেন স্বয়ং আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া এইরুপ মিথ্যে অপবাদের জেরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মনে চরম মাত্রায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর এই ক্ষোভের বশবর্তী হয়েই দিনে দিনে ক্রমশ তারা চরম থেকে চরমতম আন্দোলনের পথে অগ্ৰসর হচ্ছেন।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের করা লাগাতার কর্মবিরতিতে রাজ্য সরকার অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর গুলিতে প্রতি মূহুর্তে পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর দরুন রাজ্য সরকার কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারী সকল কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের কোনো ভাবেই জব্দ করা যাচ্ছে না। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তারা এমনটাও দাবি করেছেন যে, রাজ্য সরকারের রাজকোষে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে তাদের প্রাপ্য বকেয়া DA মেটানো হচ্ছে না।
প্রতি মূহুর্তে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কর্মবিরতির শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে এরাজ্যের সাধারণ মানুষকে। সরকারি দপ্তর গুলিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরিষেবা না পেয়ে খালি হাতে নিরাশ হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। যার ফলে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রাজ্যের সাধারণ মানুষেদেরকে। আর সেই কারণেই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে একটা সমঝোতা করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর সেই নির্দেশেই যত শীঘ্র সম্ভব আন্দোলনকারী কর্মীদের কর্মবিরতি থেকে সরিয়ে এনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে রাজি করাতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সঙ্গে আলোচনায় বসতে মত দিয়েছে রাজ্য সরকার।
হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী গত ১৭ ই এপ্রিল এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কোন এক অজানা কারন বশত সেই আলোচনা সভা বাতিল হয়ে যায়। আর পরবর্তীতে সেই সভার দিন ধার্য করা হয়েছিল গত ২১ এপ্রিল। সেই অনুযায়ী গত ২১ এপ্রিল নবান্ন অফিসের 14th ফ্লোরে যৌথ সংগ্ৰামী মঞ্চের বেশ কিছু সদস্য বিকেল পাঁচটা নাগাদ পোঁছে যান। সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা ধরে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার পর সেই সভা থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে যৌথ সংগ্ৰামী মঞ্চের নেতা ভাষ্কর ঘোষ জানান যে, সেদিনের সেই আলোচনা সভা করেও কোনো লাভ হয়নি অর্থাৎ সেই সভার ফলাফল শূন্য। এর পাশাপাশি তিনি এরূপ মন্তব্যও প্রকাশ করেছেন যে, রাজ্য সরকারের যথেষ্ট অর্থবল থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে রাজ্য সরকার তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন।
যৌথ সংগ্ৰামী মঞ্চের নেতা ভাষ্কর ঘোষের এই রুপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এতে তাদের কোনো দোষ নেই অর্থাৎ তারা নিরুপায়। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে ঠিকঠাক মতো অর্থ সাহায্য করছে না। আর তাই রাজ্য সরকারও তার অধীনস্থ কর্মীদের ন্যায্য পাওনা মেটাতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক ভাবে অর্থ সাহায্য করলেই যত শীঘ্র সম্ভব রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তার অধীনস্থ সকল কর্মীদের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ তা মেটানো হবে সেই বিষয়ে ওইদিন ওই আলোচনা সভায় রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সেভাবে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।