দেশের প্রতিটি প্রান্তের সকল পড়ুয়াদের জন্য সুখবর। K.C Mahindra Educational Trust হল ভারতের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা একুকেশানাল ইনস্টিটিউশন গুলির মধ্যে অন্যতম একটি বিখ্যাত একুকেশানাল ইনস্টিটিউশন। এটি মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরে অবস্থিত। এবারে এই বিখ্যাত একুকেশানাল ইনস্টিটিউশন K.C Mahindra Educational Trust তরফ থেকে দেশের পড়ুয়াদের ১০ লক্ষ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হল। আর এই খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের পড়ুয়া সমাজের মধ্যে এই বিষয়টিকে ঘিরে বিশেষ হৈচৈ পড়ে গেছে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই স্কলারশিপ স্কিমে আবেদন করার জন্য কি ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে, কিভাবে আবেদন করতে হবে, কত দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে সেই সব বিষয়ে বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
আমাদের দেশে এখনও এমন অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী আছে যারা তাদের পরিবারের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে ঠিকঠাক মতো লেখাপড়া করতে পারে না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার দরুন সেই সমস্ত মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের আশা অর্থাৎ উচ্চশিক্ষিত হয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলে নিজের পরিবারের মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা স্বপ্ন হয়েই থেকে যায় সারাটা জীবন। আর সেই কারণেই আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে দেশের প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের ন্যাশানাল স্কলারশিপ অর্থাৎ জাতীয় বৃত্তি প্রদান করা হয়। যাতে অর্থের অভাবে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য না হয়। তাদের যতদূর ইচ্ছে ততদূর পর্যন্ত লেখাপড়া করে তারা যেন জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যদিও এই বিষয়ে আমাদের রাজ্য সরকারেরও সমান অবদান রয়েছে। রাজ্যের দরিদ্র শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও মাইনোরিটি স্কলারশিপ, উত্তর কন্না স্কলারশিপ ইত্যাদি বেশ কিছু স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। এবং প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে এগুলি লাভ করে রাজ্যের বহু দরিদ্র মেধাবী পড়ুয়া নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়।
আর ঠিক সেভাবেই ভারতের বিখ্যাত এডুকেশানাল ইন্সটিটিউশন K.C Mahindra Educational Trust প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে সাহায্য করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া শুরু করেছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ভারতের প্রতিটি পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সার্বিক উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে সাহায্য করাই হল তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য কি কি নিয়ম অনুসরণ করতে হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক। নীচে এই স্কলারশিপ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য বিশদে বুঝিয়ে বলা হল।
এই স্কলারশিপের মাধ্যমে কাদেরকে কত টাকা করে দেওয়া হবে?
এই স্কলারশিপের জন্য আবেদনকারী ছাত্র ছাত্রীদেরকে যেভাবে এই স্কলারশিপের টাকা দেওয়া হবে তা হল-
১) এই স্কলারশিপের জন্য আবেদনকারী ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে থেকে যারা স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তাদের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হবে এবং সেই তালিকায় প্রথম যে তিনজনের নাম থাকবে তাদেরকে ১০ লক্ষ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া হবে।
২) আর এই তিনজনের পর বাকি যাদের নাম তালিকায় থাকবে তাদেরকে ৫ লক্ষ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া হবে।
এই স্কলারশিপের সুবিধা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
K.C Mahindra Educational Trust এর তরফ থেকে এই স্কলারশিপ লাভ করতে হলে আবেদনকারী পড়ুয়াদের নিম্নলিখিত যোগ্যতা গুলি অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন-
১) এক্ষেত্রে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে অবশ্যই ভারতের একজন স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
২) আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত যে কোনো ইউনিভার্সিটি বা ইনস্টিটিউশন থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ডিগ্ৰি কোর্স বা অন্য যে কোনো ধরনের ডিপ্লোমা কোর্স Complete করে থাকতে হবে।
৩) এক্ষেত্রে কেবলমাত্র যেসব ছাত্র ছাত্রীরা বিদেশের কোনো নামকরা ইউনিভার্সিটির অধীনে ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শুরু হওয়া কোনো কোর্সের জন্য আবেদন করছেন তারাই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন বাকিরা নন।
৪) আবেদনকারীর নিজের নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
কিভাবে আবেদন করতে হবে?
এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে আগ্রহী পড়ুয়াদের অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এবং তা যেভাবে করতে হবে তা হল-
১) প্রথমেই Buddy4Study এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://www.buddy4study.com/Scholarship/K-c-mahindra-scholarships-for-post-graduate-studies-aboard এ প্রবেশ করতে হবে।
২) এরপর সেখানে একেবারে নীচের দিকে Apply Now অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩) এরপর একটি নতুন পেজ খুলবে সেখান থেকে Registration লিঙ্কে আবেদনকারীকে তার নিজের নাম, ঠিকানা, একটি বৈধ ইমেল আইডি ও ফোন নাম্বার সহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
৪) রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আরেকটি নতুন পেজ খুলবে সেখান থেকে K.C. Mahindra Scholarships for Post-Graduate Studies Abroad অপশনে গিয়ে Click Here to Apply বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৫) এরপর যে পেজটি খুলবে সেখান থেকে Create an Account অপশনে ক্লিক করে নির্দিষ্ট স্থান অনুযায়ী প্রয়োজন মতো তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
৬) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের ফর্ম আসবে সেখানে নির্দিষ্ট স্থান অনুযায়ী প্রয়োজন মতো তথ্য দিয়ে ফিলাপ করতে হবে।
৭) এরপর এক এক করে সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার ডকুমেন্টস সহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই অ্যাপ্লিকেশান হয়ে যাবে।
কি কি ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে?
এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করার সময় যে সব ডকুমেন্টস গুলি স্ক্যান করে আপলোড করে সাবমিট করতে হবে সেগুলি হল-
১) বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট বা বার্থ সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
২) আধার কার্ড/ভোটার কার্ড স্ক্যান করা।
৩) মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা কোর্স পাসের মার্কসীট ও সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
৪) স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
৫) Rank সার্টিফিকেট স্ক্যান করা।
৬) IELTS/TOEFL score -এর একটি কপি স্ক্যান করা।
৭) GRE/GMAT score -এর একটি কপি স্ক্যান করা।
৮) Recomendation লেটার স্ক্যান করা।
৯) Admission লেটারের জেরক্স স্ক্যান করা।
১০) আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রী ভবিষ্যতে কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে চান তার সম্পর্কে একটি সাদা কাগজে লেখা বিবরন স্ক্যান করা।
১১) আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীর নিজের নামে খোলা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাসবুকের প্রথম পাতা স্ক্যান করা।
কিভাবে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে?
এখানে আবেদনকারী পড়ুয়াদের অনলাইন আবেদন পত্র সহ অন্যান্য সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলি জমা পড়ার পর সেগুলি খতিয়ে দেখে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী স্কলারশিপের অর্থ K.C Mahindra Educational Trust তরফ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া হবে।
কত দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে?
K.C Mahindra Educational Trust তরফ থেকে দেওয়া স্কলারশিপের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন পত্র জমা নেওয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে এবং তা চলবে আগামী ৩১/০৩/২০২৩ পর্যন্ত।