পশ্চিমবঙ্গে ১৭২৯ টি শূন্যপদে ICDS অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগ | WB ICDS Anganwadi Recruitment

পশ্চিমবঙ্গে ১৭২৯ টি শূন্যপদে ICDS অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগ | WB ICDS Anganwadi Recruitment

পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গনওয়ারী চাকরিপ্রার্থীদের জন্যে বিশাল বড়ো সুখবর। অবশেষে আমাদের রাজ্যে অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার পদে কর্মী নিয়োগ করা নিয়ে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলতে থাকা মামলার অবসান ঘটল। বিগত ২৬ বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টে অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার পদে কর্মী নিয়োগ নিয়ে চলতে থাকা মামলার রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে ১৭০০ টি শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। তার রায় অনুযায়ী এই ১৭০০ শূন্যপদের অর্ধেকাংশে অর্থাৎ ৮৫০ টি শূন্যপদ অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের পদোন্নতির ভিত্তিতে পূরণ করা হবে আর বাকি ৮৫০ টি শূন্যপদে বেকার যুবক যুবতীদের নিয়োগ করা হবে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর আদালতের এই রায়ে চিন্তা মুক্ত হয়েছেন অঙ্গনওয়ারী চাকরিপ্রার্থীরা।

আজ থেকে ২৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে আমাদের রাজ্যে শেষবার অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেয়েছিল। তারপর পুনরায় ২০১৯ সালে ৩,৪৫৮ টি শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

২০১৫ সালে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগ করা নিয়ে যে নির্দেশনা জারি করেছিল তাতে ৩,৪৫৮ টি শূন্যপদের অর্ধেক শূন্যপদ অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের পদোন্নতির ভিত্তিতে পূরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নিয়ম অগ্ৰাহ্য করে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অগ্ৰাহ্য করে রাজ্য সরকার নিজের মতো করে অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল তাতে অর্ধেকের জায়গায় ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩০৩৬ টি শূন্যপদে নতুন করে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল এবং মাত্র ৪২২ টি শূন্যপদ অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রাজ্য সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসংখ্য অঙ্গনওয়ারী কর্মী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে বলে যে রাজ্য সরকার নিজের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অগ্ৰাহ্য করে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০১৯ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে অঙ্গনওয়ারী কর্মীরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। ২০২৩ সালের ১৯ শে সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি ললিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলার এক শুনানিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনায় তিনি বলেন যে মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের পদোন্নতির ভিত্তিতে পূরণ করতে হবে। তবে রাজ্য সরকার বিচারপতির সেই নির্দেশ অগ্ৰাহ্য করে নিজের সিদ্ধান্ত মতো নিয়োগ প্রক্রিয়া চালনা করে।

পরবর্তী কালে ২০২৪ সালে পুনরায় অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগের এই মামলাটি হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। বিচারপতি রাজা শেখর মান্থাও আগের বিচারপতি ললিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়কে সম্মতি জানিয়ে সেই রায় বজায় রেখেই মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের পদোন্নতির ভিত্তিতে পূরণ করা বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশ দেন।

পশ্চিমবঙ্গের আইনজীবীদের মতে হাইকোর্টের এই রায় আমাদের রাজ্যের অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে করা মামলার সুবিচার দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি হাইকোর্টের রায় মেনে কাজ করে তাহলে অতি দ্রুত ১৭০০ শূন্যপদে নতুন করে অঙ্গনওয়ারী সুপারভাইজার পদে কর্মী নিয়োগ করা সম্ভব হবে।

দীর্ঘ ২৬ বছর পর অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগের মামলার সুবিচার হওয়ায় অঙ্গনওয়ারী কর্মী ও চাকরিপ্রার্থীদের মনে নতুন করে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে। এখন সেই দিনের অপেক্ষা যে কত তাড়াতাড়ি রাজ্য সরকার হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ১৭০০ শূন্যপদে নতুন করে অঙ্গনওয়ারী কর্মী নিয়োগের প্রস্তুতি নেয় এবং তা সম্পন্ন করে।

Leave a Comment